ফাইল চিত্র।
‘মেজ বোন’ নন্দীগ্রামকে সেতু উপহার দেবেন বলে বিধানসভা ভোটের আগে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি ভোটে হেরেছেন। ঘোষণা মতো সেতু তৈরির কাজও শুরু হয়নি এখনও। এর মধ্যেই নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা ভোটে মমতার প্রতিপক্ষ শুভেন্দু অধিকারী শিল্পশহর হলদিয়ার সঙ্গে নন্দীগ্রামকে সেতুর মাধ্যমে জুড়তে কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন। আশা আর প্রতিশ্রুতির বাক্যবাণে ফের সরগরম নন্দীগ্রামের জোড়া ফুল এবং গেরুয়া শিবিরের রাজনীতি।
গত বুধবার শুভেন্দু দিল্লিতে দেখা করেছেন কেন্দ্রীয় সড়ক-পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর সঙ্গে। সেই বৈঠকের পর শুভেন্দু দু’জনের ছবি পোস্ট করে টুইটারে লিখেছেন, ‘নিতিন গডকড়ীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। আমি তাঁকে নন্দীগ্রাম-হলদিয়া সেতু এবং ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের অগ্রগতি নিয়ে অনুরোধ করেছি। তিনি আমাকে নিশ্চিত করেছেন, এই বিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতার।’’
অন্য দিকে, গত বছর ডিসেম্বরে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে নন্দীগ্রামের তেখালিতে গিয়ে সভা করেছিলেন মমতা। সেখানেই তাঁকে হুগলি নদীর উপর হলদিয়া এবং নন্দীগ্রামের মধ্যে সেতু তৈরির বিষয়ে মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল। পরে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্য বিধানসভায় অন্তর্বর্তী বাজেটে হলদি নদীর উপর সেতু তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এতে শিল্প শহর এবং নন্দীগ্রামবাসী খুশি। কিন্তু যুযুধান দুই রাজনৈতিক শিবিরে তৎপরতা নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে জেলার রাজনীতিতে।
হলদি নদীর উপর সেতু তৈরি করা হলেও, যে অংশে তা শেষ হবে সেটি অন্তর্দেশীয় জলপথের সীমানার মধ্যে পড়ছে। ফলে সেতু তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন লাগবে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি। নন্দীগ্রামের স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ওই অনুমতি নিতেই শুভেন্দু কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন। সেতুর আসল রূপকার মুখ্যমন্ত্রীই। নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্বদেশ দাস বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বাজেট ঘোষণা করেছেন সেতু হবে। তাছাড়া, সেতু তৈরির আগে মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ের কাজকর্ম হয়ে গিয়েছে বলে জানি। তাই নতুন করে সেখানে অন্য কেউ আর সেতু তৈরির কাজ করতে পারবেন না। তবে এলাকার বিধায়ক হিসাবে শুভেন্দু অধিকারী হয়তো কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে যে অনুমতি লাগে, তা যাতে দ্রুত পাওয়া যায় সেই চেষ্টাই করতে গিয়েছিলেন।’’
মুখ্যমন্ত্রীর সেতু তৈরির ঘোষণাকে কটাক্ষ করে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নবারুণ নায়েক আবার বলছেন, ‘‘কাজের লোক (শুভেন্দু) ঠিকঠাক কাজ করে যাচ্ছেন। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুমাত্র নির্বাচনে চমক দিতেই ঘোষণা করেছিলেন। রাজ্য সরকারের ভাড়ার শূন্য। ওঁরা কীভাবে রাজ্য হলদি নদীর উপর সেতু বানাবেন!’’
রাজনীতির লড়াই যাই হোক না কেন নন্দীগ্রামবাসী কেবল সেতু পেলেই খুশি। হলদি নদীর একদিকে রয়েছে নন্দীগ্রাম। অন্যদিকে হলদিয়া। দুই তীরের বাসিন্দারা কর্মসূত্র, অন্য প্রয়োজনে নিয়মিত দুদিকে যাতায়াত করেন। নদী পার হতে তাঁদের ভরসা ফেরি পরিষেবা। সেই ফেরিতেও যাত্রী সুরক্ষা মানা হয় না বলে অভিযোগ। আবার, স্থলপথ হলদিয়া যেতে হলে নন্দকুমার দিয়ে ঘুরে যেতে হয়। তাতে সময় এবং খরচ বেশি লাগে।
সেতু তৈরি হলে সময় এবং খরচ বাঁচবে বলে আশাবাদী দুদিকের বাসিন্দারা। নন্দীগ্রামের বাসিন্দা রাজু মণ্ডল রোজ আনাজ নিয়ে হলদিয়ায় বিক্রি করতে যান। তাঁর দাবি, ‘‘ফেরিতে একশো টাকা খরচ লাগে। দিদি প্রথমবার বলার পর আশায় বুক বেঁধে ছিলাম। কিন্তু সেই কাজ তো চোখে পড়েনি। এখন যদি শুভেন্দুবাবুর মাধ্যমে সেতু হয়, তবে সাইকেলে চেপে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারব।’’ আবার হলদিয়া থেকে নিয়মিত ফেরি মাধ্যমে নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যান সামিনা আক্তার বানু। তাঁর কথায়, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই তো সেতু তৈরির কথা শুনে আসছি। যেই বানাক, সেতু তৈরি হলেই আমাদের সময় আর অর্থ বাঁচবে।’’