প্রশাসন জানাচ্ছে, পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশে জারি থাকবে ১৪৪ ধারা। কিন্তু শুক্রবার বাস্তবে উল্টো ছবি দেখা গেল তমলুক হাই স্কুলের সামনে। নিজস্ব চিত্র
পরিকল্পনা নেওয়া ছিল আগেই। সেই মতো প্রতি বছরের মতো এ বারও পরীক্ষার্থীদের পাশে থেকে জনমন পেতে তৎপর সব রাজনৈতিক দল। শুক্রবার মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনে কেউ গোলাপ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন। আবার কেউ পরীক্ষার্থীদের হাতে উপহার হিসেবে কলম তুলেছিলেন। কোথাও অভিভাবকদের বসার জন্য ছাউনির বন্দোবস্ত করা হল। আর এ সব করতে গিয়ে কোথাও লঙ্ঘন করা হল ১৪৪ ধারও।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক তনবীর আফজল এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘কিছু পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রবেশপথে লোক জমায়েত নিয়ে অভিযোগ এসেছে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, বিভিন্ন জেলার নেতাদের দিন কয়েক আগে কালীঘাটের ডেকে পাঠিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা সঙ্গে জায়গা পেয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সাহায্যের জন্য শিবির করার বিষয়টি। রাজ্য জুড়ে শিক্ষক নিয়োগ-সহ বিভিন্ন দুর্নীতিতে চরম অস্বস্তিতে তৃণমূল। তা সত্ত্বেও এ দিন জেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্র জনসংযোগে পুরোদস্তুর নেমে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল। কাঁথির নামাল কালীপ্রসাদ বিদ্যাপীঠের সামনে তৃণমূলের তরফে পরীক্ষার্থীদের হাতে গোলাপ ফুল, নতুন কলম আর জলের বোতল তুলে দেওয়া হয়। সেখানে হাজির ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল পরিচালিত রাইপুর পশ্চিম বাড় পঞ্চায়েতের প্রধান জাহেরুন বিবি।
জেলায় এ বার ১১০টি পরীক্ষা কেন্দ্র হয়েছে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৬ হাজার ২২১ জন। প্রথম দিন পরীক্ষা নির্বিঘ্নে হলেও এ দিন সকালে তমলুক শহর, তমলুক ব্লক ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে রাজ্যের শাসকদলের নেতাদের ভিড় করতে দেখা গিয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্র-সংলগ্ন ১০০ মিটার এলাকা পর্যন্ত সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকে। কিন্তু এ দিন পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানোর নামে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা পুলিশের সামনেই গোলাপ ফুল, কলম, জলের বোতল প্রভৃতি নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রবেশপথের সামনে পৌঁছে গিয়েছিলেন।
বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি আশিস মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘তমলুক ব্লকের টুলিয়া হাইস্কুল, নাইকুড়ি ঠাকুরদাস ইনস্টিটিউশন ও অনন্তপুর গার্লস হাইস্কুেল প্রবেশ পথে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা জমায়েত হয়েছিলেন। পুলিশের সামনেই এ সব হয়েছে। জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ করলেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।’’ তমলুক ব্লক তৃণমূল সভাপতি অর্ণব চক্রবর্তীর কথায়, ’’পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রবেশপথে ও ভিতরে ঢোকা নিয়ে দলীয় কোনও নির্দেশ ছিল না। যদি কেউ তা করে থাকেন, আমরা তা সমর্থন করছি না।’’
তমলুক হাইস্কুলের (টাউন স্কুল) প্রবেশপথে তমলুক পুরসভার প্রায় সমস্ত তৃণমূল কাউন্সিলর জমায়েত হয়ে পরীক্ষার্থীদের গোলাপ দিয়েছেন। একই ছবি শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ডিমারী হাইস্কুল, রামচন্দ্রপুর হাইস্কুল, সোনাপেত্যা ও কৃষ্ণগঞ্জ হাইস্কুলেও। তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ’’পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা অনেকটা দূরেই ছিলেন। কোথাও নিয়মভঙ্গ করার অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।’’
কাঁথি শহরের পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির বাইরে অভিভাবকদের বসার জন্য পুরসভার পক্ষ থেকে শিবির আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সব শিবির পরিদর্শন করেন পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি। আবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নিজের শহর কাঁথিতে রাখালচন্দ্র বিদ্যাপীঠ, চন্দ্রামণি ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয় এবং হরিসভা হাই স্কুলের সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে গোলাপ ফুল, নতুন কলম এবং জলের বোতল দেওয়া হয়। সেখানে ছিলেন দক্ষিণ কাঁথির বিজেপি বিধায়ক অরূপ দাস, বিজেপি নেতা সৌমেন্দু অধিকারী প্রমুখ। প্রায় দু' হাজার পরীক্ষার্থীর হাতে এই সব জিনিস তুলে দেওয়া হয় বলে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি।
এগরা মহকুমায় ১১টি পরীক্ষা কেন্দ্রে এবারে পরীক্ষা চলছে। সেখানেও পরীক্ষার্থীদের ‘উপঢৌকন’ দিতে দেখা গিয়েছে শাসক-বিরোধী দুই শিবিরকে। সেখানেও কোথাও কোথাও ভাঙা হল ১৪৪ ধারা। অভিযোগ, পুলিশের সামনেই এগরা বাসুদেব হাইস্কুল, পটাশপুরে নৈপুর শান্তিসুধা ইনস্টিটিউশন, গোপালপুর রাখাল ইউনিয়ন বিদ্যাপীঠ, ভগবানপুর হাইস্কুলের সামনে যুযুধান দু'পক্ষের রাজনৈতিক দলের কর্মীরা নির্বিঘ্নে কর্মসূচি সম্পূর্ণ করেছেন।