দাঁতনের শোকসভায় দিলীপ ঘোষ-সহ বিজেপি নেতৃত্ব। নাতি কোলে রয়েছেন পবনের বাবাও। নিজস্ব চিত্র
পরিবার বলছে, রাজনীতির সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ ছিল না। তবে সংঘর্ষে মৃত পরিযায়ী শ্রমিক পবন জানার দেহ শনিবার বিকেলে দাঁতনের কুশমীতে পৌঁছনোর সঙ্গেই এলাকায় আসেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ। পবনের বাড়ি কাছেই শোকসভা করে বিজেপি। পদযাত্রায় হাঁটেন দিলীপ। তিনি অবশ্য মৃত পবনকে দলীয় কর্মী বলেই দাবি করেছেন।
৩ জুন মুম্বই থেকে ফিরেছিলেন পবন। গত বুধবার এলাকায় বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে জখম হন তিনি। বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়। পবনের বাবা অজয় জানা বিজেপি কর্মী বলেই এলাকায় পরিচিত। তিনি, পবনের মা হীরা, স্ত্রী মলি— কেউই অবশ্য পবনকে বিজেপি কর্মী বা সমর্থক বলে মানেননি। তাঁদের বক্তব্য, পবনের কোনও দলই করত না। অজয়ও বলেন, ‘‘তৃণমূলের লোকজন মারছে দেখে আমাকে বাঁচাতে এসেই ছেলেটার এই অবস্থা হল।’’
তবে পবনের মৃত্যু নীতি রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলীপ এ দিন বলেছেন, ‘‘গ্রাম্য বিবাদ বলে রাজনৈতিক হত্যাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এর পরিণাম কিন্তু ভুগতে হবে!’’ তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির পাল্টা, ‘‘আসলে ওঁর (দিলীপ) একটা মৃতদেহের খুব দরকার ছিল। পেয়ে গিয়েছেন!’’ বস্তুত এই মৃত্যুর শোক ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কাজে লাগানোর কথা জানিয়েছেন জেলার বিজেপি নেতৃত্ব। দাঁতনের শোক সভায় দলের জেলা সভাপতি শমিত দাশের বক্তব্য, ‘‘২০২১ আমাদের পাখির চোখ। যারা এই গরিবের রক্ত শুষে খাচ্ছে, তার সব হিসেব তারপর আমরা বুঝে নেব।’’
এ দিন শোক সভার আগে পুলিশের একটি গাড়ি এগনোর চেষ্টা করলে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। ছবি তোলায় এক সাংবাদিককে মারধরও করা হয়। আর দিলীপ দাঁতন থানা এলাকায় আগেও তাদের এক কর্মীকে খুনের প্রসঙ্গ তুলে দাবি করেন, পবনের পরিবার বিজেপি করে বলেই নানা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পায়নি। আর পবনের মৃত্যু প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতির অভিযোগ, ‘‘সে বাড়ি বাড়ি জন সম্পর্ক করছিল। সেই অপরাধে তার ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। শুধু বিজেপি করার অপরাধে।’’
পবনের দেহ নিয়ে এ দিন সকালে প্রথমে মেদিনীপুরে পৌঁছন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। ছিলেন সাংসদ দিলীপ ঘোষ, দলের রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায়, দলের জেলা সভাপতি শমিত দাশ প্রমুখ। দলের জেলা কার্যালয়ের সামনে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পরে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় দাঁতনে। মেদিনীপুরে এক প্রশ্নের জবাবে দিলীপ বলেন, ‘‘এটা নতুন ঘটনা নয়। আমার জানার মধ্যে গত ছ’-সাত বছরে এটা ১০৩ নম্বর মৃত্যু আমাদের কার্যকর্তা-কর্মীদের মধ্যে।’’ তৃণমূলকে নিশানা করে তাঁর সংযোজন, ‘‘এই সরকার যতদিন থাকবে রাজনৈতিক হিংসা চলবে। স্থানীয়দের বাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি দিতে যাচ্ছে একটা ছেলে, তার উপরে তরোয়াল দিয়ে আক্রমণ হয়েছে।’’
অন্য দিকে, তৃণমূল জেলা সভাপতি অজিত দিলীপকে ‘পরিযায়ী-সাংসদ’ বলে বিঁধেছেন। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘করোনায় আসেননি। ত্রাণ দিতে আসেননি। আমপানে আসেননি। পরিযায়ী- সাংসদ বিপদে-আপদে থাকেন না। তাই তো দলে দলে বিজেপির নেতা-কর্মীরা দল ছেড়ে তৃণমূলে আসছেন। শনিবার পিংলা, গড়বেতা, গোয়ালতোড়ের অনেকে যোগ দিয়েছেন। রবিবার, সোমবারও যোগ দেবেন।’’