হোটেল, লজকে সতর্ক করল পুলিশ
elephant

tourism: পর্যটক টানতে হাতির টোপ নয়

ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে গড়শালবনির জঙ্গলেও পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বলা হয়েছে প্যাকেজে। অথচ গড়শালবনির জঙ্গলে বারোমাসই হাতি থাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৩২
Share:

হাতির টোপ দিয়ে প্যাকেজ ট্যুরের বিজ্ঞাপন। নিজস্ব চিত্র।

হাতি দেখানোর টোপ দিয়ে ঝাড়গ্রামে পর্যটক টানতে উদ্যোগী হয়েছেন একাধিক পর্যটন ব্যবসায়ী ও হোটেল মালিক। সম্প্রতি এমনই একটি বিজ্ঞপ্তি বন দফতরের নজরে এসেছে। সেখানে ঝাড়গ্রামেকে ‘হাতির দেশ’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে গড়শালবনির জঙ্গলেও পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বলা হয়েছে প্যাকেজে। অথচ গড়শালবনির জঙ্গলে বারোমাসই হাতি থাকে।

Advertisement

চলতি বছরের জুলাইয়ে বেআইনি ভাবে স্থানীয় কেঁউদিশোলের জঙ্গলে হাতি দেখতে ঢুকে দাঁতালের হানায় প্রাণ হারিয়েছিলেন কলকাতার বাসিন্দা এক তরুণ পর্যটক। তার পরেও একাংশ পর্যটন ব্যবসায়ীর হুঁশ ফেরেনি বলে অভিযোগ। বিষয়টি নজরে আসার পরেই বন দফতরের তরফে নির্দেশিকা দিয়ে শহর ও গ্রামীণ এলাকার ৪৫টি হোটেল, রিসর্ট ও হোম স্টে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, শীতের মরসুমে বহু পর্যটক আসছেন। এই সময়ে ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের বিভিন্ন জঙ্গলে কিছু হাতি রয়েছে। পর্যটকদের এই সময়ে জঙ্গলে নিয়ে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। বেআইনি ভাবে জঙ্গলে প্রবেশ করলে পর্যটক ও হোটেল-রিসর্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বন দফতর। হাতি দেখানোর নাম করে কোনও ভাবে পর্যটন-প্রচার চলবে না বলেও লজ, হোটেল, রিসর্ট, হোম স্টে ও পর্যটন সংস্থাগুলিকে এক নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন ঝাড়গ্রামের ডিএফও শেখ ফরিদ।

গত জুলাইয়ে ঝাড়গ্রাম শহর থেকে কিলোমিটার দশেক দূরে গড়শালবনি এলাকার একটি ভিলেজ রিসর্টে উঠেছিলেন কয়েকজন তরুণ পর্যটক। কলকাতার ওই পর্যটকেরা জঙ্গলে হাতি দেখতে গাড়ি উজিয়ে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু হাতি সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ওই পর্যটকদের একজন দাঁতালের হানায় প্রাণ হারান। প্রাক্তন বনকর্তা সমীর মজুমদার বলছেন, ‘‘পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য হাতির প্রচার করাটা বিপজ্জনক। হাতি দেখতে জঙ্গলে যাওয়া বা হাতির সঙ্গে নিজস্বী তোলার চেষ্টাও আত্মহত্যার শামিল।’’ সমীর জানাচ্ছেন, লোধাশুলি ও ঝাড়গ্রাম রেঞ্জের বিস্তীর্ণ খাসজঙ্গলে হাতিরা এখন বছরের অনেকটা সময়ই থাকছে। ওই সব এলাকায় রিসর্ট ও হোম স্টে তৈরি হয়েছে। ফলে, একাংশ পর্যটক জঙ্গলে হাতি দেখার প্রলোভন এড়াতে পারেন না। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এই এলাকায় লোকজনের তাড়া খেয়ে হাতিদের স্বভাবেরও পরিবর্তন হয়েছে। মানুষজনকে দেখলে আত্মরক্ষার্থে হাতি তেড়ে আসে। তাই হাতির কাছাকাছি যাওয়াটা অনভিজ্ঞ লোকজনের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। দীর্ঘদিন ধরে বন্যপ্রাণীর ছবি তুলছেন ঝাড়গ্রামের বিশ্বরূপ মণ্ডল। তিনি বলছেন, ‘‘পর্যটনের নামে পর্যটকদের হাতি দেখানোর প্রলোভন বন্ধ হওয়া উচিত।’’

Advertisement

ঝাড়গ্রাম হোটেল ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংগঠনের বৈঠক ডেকে এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক করা হবে।’’ পর্যটন দফতর স্বীকৃত ‘ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম’-এর কর্তা সুমিত দত্ত বলেন, ‘‘পর্যটকদের সচেতন করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে পর্যটকরা দুর্ঘটনার মুখে না পড়েন।’’ ঝাড়গ্রামের ডিএফও শেখ ফরিদ বলছেন, ‘‘এই ধরনের সমস্ত রিসর্টে লিখিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, উপযুক্ত বিভাগীয় অনুমতি ছাড়া জঙ্গলে প্রবেশ করলে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’ বন প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাও বলছেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডের দলমা থাকে হাতির দল ঝাড়গ্রামে আসে। ঝাড়গ্রামকে ‘হাতির দেশ’ বলে মিথ্যাচার করাটা নিন্দনীয়। হাতির টোপ দিয়ে পর্যটক টানার চেষ্টা হলে বন দফতর ও প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপ করতে বলেছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement