—প্রতীকী ছবি।
অসবর্ণ বিয়ে। তাকে কেন্দ্র করে গোলমালের জেরে মামলা। সাত বছরের সেই পুরনো মামলা তুলে নেওয়ার দাবিতে সোমবার রাতে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ঘাটালের বেড়বেড়ি গ্রাম।
পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, দু’দফায় জল, বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করতে গিয়ে পুলিশকে ঘিরে শুধু বিক্ষোভই হল না। গ্রামবাসীরা পুলিশকে ঘিরে জানাল, প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে গেলে হবে না। গ্রামের আটচালায় মোড়লদের সঙ্গে পুলিশকে আলোচনায় বসতে হবে। সেখানে পুরনো মামলা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে লিখিত সিদ্ধান্ত হবে। সোমবার রাতের ওই সংঘাতের ঘটনায় আটজন গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার তাঁদের ঘাটাল আদালতে তোলা হলে বিচারক প্রত্যেককেই ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০১২ সালে ঘাটালের সিংহডাঙা সংলগ্ন বেড়বেড়ি গ্রামে হিমাদ্রি কালসারের ভাই নিলাদ্রির সঙ্গে গ্রামেরই বাসিন্দা পম্পা দাসের বিয়ে হয়। অসবর্ণ ওই বিয়েকে কেন্দ্র করে গোলমালের সূত্রপাত। সেসময় গ্রামবাসীদের সঙ্গে কালসার পরিবারের ঝামেলা বাধে। মারধর করা হয় ওই পরিবারের সদস্যদের। ঘটনায় থানায় গ্রামবাসীদের কয়েকজনের নামে মামলা হয়। এখনও ঘাটাল আদালতে সেই মামলা চলছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, পুরনো মামলা তুলে নেওয়াকে কেন্দ্র করে ক’দিন ধরে গ্রামে উত্তেজনা ছিল। সোমবার সন্ধ্যায় গ্রামের লোকজন কালসার বাড়িতে চড়াও হয়। অভিযোগ, স্বজলধারা প্রকল্পের জলের লাইন ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। বাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। দু’টি গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতির সামাল দেয়। পুলিশের উদ্যোগেই জুড়ে দেওয়া হয় জল ও বিদ্যুতের সংযোগ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর পুলিশ গ্রাম ছাড়তেই ফের উত্তেজনা তৈরি হয়। গ্রামবাসীদের দাবি, রাতেই পুলিশকে উপস্থিত থেকে মামলা তোলার লিখিত চুক্তি করতে হবে। ফের ওই পরিবারের জল, বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছয়। তারপরই পুলিশের গাড়ি ঘিরে শুরু হয় বিক্ষোভ। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে বিশাল পুলিশ বাহিনী রাতে পৌঁছয়।
হিমাদ্রি বলেন, “আমার ভাই ভালবেসে বিয়ে করেছিল। তারজন্য অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে। এখন আবার মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে। সোমবার জল,বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। বাড়িতেও হামলা চালায়।” গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, মামলা তুলে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে কয়েকমাস ধরে। কিন্তু তা ফলপ্রসূ না হওয়ায় পুলিশের উপর রাগ গিয়ে পড়ে। তবে গ্রামবাসীদের আরেক অংশের অবশ্য বলছেন, “সোমবার রাতে যা হয়েছে, তা না হলেই ভাল হত। এতে গ্রামের নামই খারাপ হল।” ঘাটালের মহকুমা পুলিশ অফিসার কল্যাণ সরকার বলেন, “পুরনো মামলা তুলে নিতে আচমকা গ্রামবাসীরা এক পরিবারে হামলা চালায়। ঘটনায় আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”
কিন্তু কেন এতদিন পরে পরিস্থিতি এত উত্তপ্ত হয়ে উঠল? এর নেপথ্যে কি কোনও রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে? সবই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।