ভোল-বদল: স্টলে শুধু ট্রাফিক পুলিশের সরঞ্জাম। নিজস্ব চিত্র
স্টল জুড়ে সাজানো রকমারি সব অস্ত্র। খুব কাছ থেকে একে ৪৭, এসএলআর, ইনসাস, কার্বাইন, পয়েন্ট থ্রি-নট-থ্রি বন্দুক, গ্রেনেড ও লঞ্চার দেখার সুযোগ। সেই সঙ্গে দেওয়াল জুড়ে পুলিশের জনসংযোগ ও সাফল্যের নানা খতিয়ান।
এত দিন এটাই ছিল জঙ্গলমহল উৎসবে পুলিশের স্টলের চেনা ছবি। কিন্তু এ সব যাঁর পরিকল্পনা মাফিক হতো, সেই ভারতী ঘোষ পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের পদ থেকে সরে যেতেই বদলে গেল পুলিশের স্টলের চেহারা। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ ও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিষয়ক দফতরের আয়োজনে চতুর্থ বর্ষের জঙ্গলমহল উৎসব চলছে (৩ থেকে ১০ জানুয়ারি) ঝাড়গ্রাম শহরের কুমুদ কুমারী বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। মেলায় মোট ৪২টি সরকারি স্টল রয়েছে। কিন্তু পুলিশের স্টলে অস্ত্রশস্ত্রের বালাই নেই। বদলে রয়েছে ট্রাফিক পুলিশের নানা সরঞ্জাম। দেওয়ালেও ট্রাফিক পুলিশের নানা কর্মসূচির ছবি। আর আছে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’-এর বার্তাবাহী প্রদর্শনী।
গত ২৫ ডিসেম্বর জেলা পুলিশ সুপারের পদ থেকে ভারতীকে বদলি করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন ভারতী কেন কোপে পড়লেন, তা নিয়ে জল্পনা শেষ হতে না হতেই দু’দিনের মাথায় একেবারে পুলিশের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে দেন ভারতী। সেই পদত্যাগপত্র গৃহীতও হয়ে গিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের নতুন পুলিশ সুপার পদে যোগ দিয়েছেন অলোক রাজোরিয়া। পাশাপাশি ভারতী-জমানায় দাঁড়ি টানতে তাঁর ঘনিষ্ঠ পুলিশ আধিকারিকদের বদলি, ভারতীর আমলের সিদ্ধান্তে রদবদল হয়েছে নবান্নের নির্দেশে।
ঝাড়গ্রাম প্রশাসনিক ভাবে আলাদা জেলা হয়েছে ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল। আর ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলা তৈরি হয়েছে তার বেশ কয়েক বছর আগে। বর্তমান সরকারের আমলে ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার এসপি হিসেবে ভারতী দায়িত্ব সামলেছেন। আবার বিভিন্ন সময়ে ঝাড়গ্রামের দায়িত্বে না থেকেও মেদিনীপুর থেকেও ঝাড়গ্রামের পুলিশ-প্রশাসনের খুঁটিনাটি সামলেছেন তিনি। জঙ্গলমহল উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কখনও ভারতী আসতেন না। তবে উৎসবের দিনগুলোতে রাতে আচমকা স্টল পরিদর্শনে আসতেন। গত বছরও উৎসব চলাকালীন দুবার কুমুদ কুমারী স্কুল মাঠে পুলিশের স্টলে এসেছিলেন ভারতী। ভারতী সরতেই সেই চির চেনা ছবির ছন্দ পতন।
জঙ্গলমহল উৎসবে পুলিশের স্টলের ভোলবদল চোখে পড়ছে দর্শকদেরও। অনেকেই বলাবলি করছেন, ‘‘আগে স্টলে ভারতী ঘোষের কত ছবি থাকত। কাছ থেকে আধুনিক সব অস্ত্র দেখার সুযোগ মিলত। এ বার সে সব কিছুই নেই।’’
জেলা পুলিশের একাংশ মানছেন, ভারতী জমানায় যে দাঁড়ি পড়ে গিয়েছে, সে কথা বোঝাতেই তাঁর আমলের কোনও পরিকল্পনা এ বার স্টল সাজাতে রাখা হয়নি। তবে প্রকাশ্যে সে কথা বলছেন না কেউই। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদার কথায়, ‘‘উৎসবে সরকারি স্টলগুলিতে বিভিন্ন উন্নয়ন-কাজের প্রতিফলন থাকে। তবে স্টলে কী থাকবে সেগুলি সংশ্লিষ্ট দফতর ঠিক করে। পুলিশের স্টলের বিষয়বস্তু জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছেন।’’
আর জেলার এক পুলিশ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘জঙ্গলমহলে শান্তি স্থাপনের কৃতিত্ব কেবল মুখ্যমন্ত্রীর। রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী এটা পুলিশের টিম ওয়ার্ক।’’ কিন্তু অস্ত্র প্রদর্শনী নেই কেন? ওই পুলিশ আধিকারিকের জবাব, ‘‘প্রতি বছর অস্ত্র প্রদর্শনী থাকে। এ বার বৈচিত্র্য আনতে ঝাড়গ্রাম জেলা ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন সরঞ্জাম ও ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিচালনার বিভিন্ন ছবি দিয়ে স্টল সাজানো হয়েছে।’’