খোঁড়া হচ্ছে কবর। নিজস্ব চিত্র
আত্মহত্যা না খুন জানতে মৃত্যুর প্রায় আড়াই বছর পরে কবর খুঁড়ে তোলা হল কঙ্কাল। পুলিশ সূত্রে খবর, কঙ্কালটি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশেই এই পদক্ষেপ। মঙ্গলবার সকালে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের মাজুরিয়ায় কবর খুঁড়ে ওই কঙ্কাল তোলা হয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, ‘‘ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য কঙ্কালটি তোলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশেই পুলিশের এই পদক্ষেপ।’’ ঘটনাটি খুন না আত্মহত্যা? জেলা পুলিশের অন্য এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সেটা জানারই তো চেষ্টা চলছে। তদন্ত তো সে জন্যই। ঘটনাটি খুন না আত্মহত্যা তা ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট না এলে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না।’’
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মারা যান মাজুরিয়ার শেখ লোকমান আলি। তখন এই যুবকের মৃত্যু নিয়ে পুলিশের কাছে কেউ কোনও অভিযোগ করেননি। মৃতদেহের ময়নাতদন্তও হয়নি। দেহটি কবর দিয়ে দিয়েছিলেন মৃত যুবকের পরিজনেরা। সম্প্রতি মেদিনীপুর আদালতের দ্বারস্থ হয়ে লোকমানের মা সেরজুনা খাতুন অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে। সেই সময়ে তিনি ভয়ে কিছু বলতে পারেননি। সেরজুনার অভিযোগের তির তাঁর বৌমা এবং এলাকার কয়েকজনের দিকেই। সেরজুনা পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তিনি তাঁর ছোট মেয়ে ডালিয়া খাতুনের বাড়িতে ছিলেন। রাতে তিনি জানতে পারেন যে তাঁর ছেলে গুরুতর অসুস্থ। পুলিশের কাছে সেরজুনা দাবি করেছেন, ওই রাতে তাঁকে জানানো হয়েছিল, ছেলে বিষ খেয়েছে। খবর পেয়ে তিনি পরিচিতদের ডেকে ছেলেকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। কিন্তু ততক্ষণে ছেলে মারা গিয়েছে। ঘটনার পরে গ্রামের কয়েকজন তাঁকে এবং তাঁর স্বামীকে গাছে বেঁধে মারধর করেছিলেন। কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার চাপে তিনি তাঁর কিছু জমি বৌমার নামে লিখেও দিয়েছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সম্পত্তি নিয়ে ওই পরিবারে বিবাদ ছিল। সেই বিবাদ থেকে মাঝেমধ্যে গোলমালও হয়েছে। ঘটনার পরে পড়শিদের একাংশ দাবি করেছিলেন, সেরজুনার জন্যই তাঁর ছেলে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কারণ, সেরজুনা তাঁর জমি মেয়েদের নামে লিখে দিতেন। কিন্তু ছেলের নামে লিখে দিতেন না। সেই নিয়ে মানসিক অবসাদে ভুগতেন লোকমান। সেরজুনা অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি এখন মাজুরিয়ার বাড়িতে থাকেন না। থাকেন তাঁর এক মেয়ের বাড়িতে। সম্প্রতি আদালতের দ্বারস্থ হয়ে সেরজুনা অভিযোগ করেছেন, তাঁর ছেলেকে খুন করে মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর ছেলে আত্মহত্যা করেননি, ছেলেকে খুনই করা হয়েছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ফরেন্সিক পরীক্ষা জরুরি। আদালতের নির্দেশে এদিন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর খুঁড়ে ওই কঙ্কাল তোলা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। মেদিনীপুর সিজেএম আদালতের সরকারি আইনজীবী সৈয়দ নাজিম হাবিব মানছেন, ‘‘ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য কবর খুঁড়ে ওই কঙ্কাল তোলার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।’’
মেডিক্যালের এক সূত্র জানাচ্ছে, পুলিশ এদিনই কঙ্কালটি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগে পৌঁছে দিয়েছে। কঙ্কালের ফরেন্সিক পরীক্ষার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। রিপোর্টও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পুলিশকে দেওয়া হবে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে মৃতদেহের ফরেন্সিক পরীক্ষাই একমাত্র পথ।