মহম্মদ আজিম ওরফে পাপ্পু। নিজস্ব চিত্র
কুরবান শা হত্যাকাণ্ডে পুলিশের জালে ধরা পড়ল আরও এক অভিযুক্ত। পুলিশ মহম্মদ আজিম ওরফে পাপ্পুকে খড়্গপুর থেকে গ্রেফতার করেছে। ২০১৮ সালে খড়্গপুরের রেল মাফিয়া বাসব রামবাবুর বাড়িতে গুলি চালানোর ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছিল পাপ্পুর।
শনিবার পাপ্পুকে খড়্গপুর মহকুমাশাসকের আদালতে এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে তোলা হয়। বিচারকের নির্দেশে পাপ্পুকে আপাতত জেলে রাখা হয়েছে। তবে তাকে খুব শীঘ্রই তাকে তমলুক আদালতে তোলা হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এ নিয়ে পাঁশকুড়ার তৃণমূল নেতা কুরবানের খুনের ঘটনায় গ্রেফতারির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল নয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, কুরবান খুনের শ্যুটার তসলিম আরিফ ওরফে রাজার বন্ধু ছিল পাপ্পু। সে খড়্গপুরের পাঁচবেড়িয়ার বাসিন্দা। কুরবান খুন হওয়ার অন্তত মাস খানেক আগে থেকে রাজা ও তার দলবল মাইশোরায় আসা যাওয়া করত। সেই সময় রাজারা খড়্গপুর থেকে পাপ্পুর গাড়িতে পাঁশকুড়া পর্যন্ত আসাত এবং সেখান থেকে তাদের গাড়ি করে নিয়ে আসত মাইশোরার শ্যামবল্লভপুর গ্রামের ফেরার অভিযুক্ত গোলাম মেহাদি ওরফে কালু।
রাজা ধরা পড়ার পরে পাপ্পু গা ঢাকা দেয়। তমলুক আদালত তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে। আদালতের নির্দেশে ডিসেম্বরের গোড়ায় পাপ্পুর অস্থাবর সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। শেষে শুক্রবার রাতে তার বাড়ি ফেরার খবর জানতে পারে পুলিশ। ওই রাতেই বাড়ি থেকে পাপ্পুকে গ্রেফতার করে খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, পাপ্পুরা ছয় ভাই। ছোট পাপ্পু এলাকায় গাড়ি চালক হিসাবে পরিচিত ছিল। শহরের বাসস্ট্যাণ্ড এলাকায় পুরনো গাড়ি বেচা-কেনার কাজও করত সে। তবে বছর কয়েক ধরেই চুরি, ডাকাতি-সহ নানা রকম সমাজবিরোধী কাজে নাম জড়ায় তার। ২০১৯ সালে একবার গ্রেফতারও হয়েছিল সে। জামিনে মুক্তি পেয়ে বাইরে ছিল। পাপ্পুর দাদা মহম্মদ তানবীর বলেন, “আমাদের সঙ্গে পাপ্পুর এখন কোনও যোগাযোগ নেই। ও আলাদা থাকে। এর আগে ও যখন গ্রেফতার হয়েছিল, সেই সময় দুঃখে বাবা মারা গিয়েছিলেন। এখন তো শুনছি এই ঘটনা। এই বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।”
পাপ্পুর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “পাপ্পুর বিরুদ্ধে তমলুক আদালতের একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। সেই অনুযায়ী আমরা ওকে গ্রেফতার করেছি।’’ যেহেতু কুরবান হত্যা মামলাটি তমলুক আদালতে বিচারাধীন, তাই ওকে তমলুক আদালতেই তোলা হবে। এই প্রসঙ্গে খড়্গপুরের মহকুমাশাসক বৈভব চৌধুরী বলেন, “পাপ্পুকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। আমরা ধৃতকে তমলুক সিজেএম আদালতে হাজির করতে বলেছি। মাঝে ছুটির দিন থাকায় পুলিশ আপাতত ধৃতকে জেলে রাখতে পারে।”
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর মাইশোরায় দলীয় কার্যালয়ের মধ্যেই খুন হন তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক কার্যকরী সভাপতি কুরবান। ওই খুনের ঘটনায় পুলিশ আগে আনিসুর রহমান-সহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে। কুরবান হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য ইতিমধ্যে মামলাটি তিন নম্বর অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতে পাঠিয়েছেন তমলুক জেলা আদালতের বিচারক। আগামী ২০ তারিখ এই মামলার শুনানি রয়েছে আদালতে।