Crime

ট্রেনে বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধারে গ্রেফতার ১

হাসানের পরিবারের দাবি, নিউ দিঘায় ২১ লক্ষ টাকায় একটি হোটেল এক বছরের জন্য লিজ নিতে চেয়েছিলেন হাসান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২০ ০০:৫৮
Share:

মৃত ব্য়ক্তির নাম হাসান আলি—নিজস্ব চিত্র।

ফাঁকা ট্রেনের কামরায় দিন কয়েক আগে উদ্ধার হয়েছিল এক ব্যক্তির বস্তা-ট্রলিবন্দি দেহ। মাঝে এক সপ্তাহের ব্যবধান। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার কাঁথির মারিশদা থেকে তহিজুদ্দিন শেখ ওরফে রাজু হালদার নামে এক যুবককে গ্রেফতার করল পাঁশকুড়া জিআরপি থানার পুলিশ।

Advertisement

গত মঙ্গলবার রাতে মেচেদা স্টেশনে হাওড়া-মেচেদা লোকালে যে ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়েছিল, তাঁর নাম শেখ হাসান আলি। তিনি পাঁশকুড়ার গোবিন্দনগর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী। কর্মসূত্রে কলকাতায় বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে থাকতেন। ধৃত তহিজুদ্দিন তাঁর পূর্ব পরিচিত।

হাসানের পরিবারের দাবি, নিউ দিঘায় ২১ লক্ষ টাকায় একটি হোটেল এক বছরের জন্য লিজ নিতে চেয়েছিলেন হাসান। সে জন্য তিনি চারজন দালালের সঙ্গে কথা পাকা করেছিলেন। হাসান হোটেল মালিককে ১৫ লক্ষ টাকা মিটিয়েও দিয়েছিলেন বলে দাবি তাঁর পরিবারের। ২৪ ফেব্রুয়ারি দিঘায় লিজের বাকি ছ’লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য কলকাতা থেকে রওনা দেন হাসান।

Advertisement

পাঁশকুড়া জিআরপি সূত্রের খবর, তহিজুদ্দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের বাসিন্দা। তবে সে রামনগরে রাজু নাম নিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল। প্রাথমিক জেরায় তহিজুদ্দিন হাসানকে খুনের কথা শিকার করেছে। জেরায় সে জানিয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি সে হাসানকে রামনগর বাসস্ট্যান্ডে নেমে যেতে বলে। জানায়, তারা এক সঙ্গে দিঘায় হোটেল মালিকের কাছে যাবে। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় হাসান রামনগরে নেমে যান। তহিজুদ্দিন তাঁকে তার ভাড়া বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গৌতম এবং ননী নামে দু’জন হাজির ছিল। ওই বাড়িতেই শ্বাসরোধ করে হাসানকে খুন করে তহিজুদ্দিনরা। পরে ভারী পাথর দিয়ে মুখ থেঁতলে দেওয়া হয়। ওই দিন হাসানের দেহ বাড়িতেই রাখা হয়েছিল বলে জেরায় জানিয়েছে তহিজুদ্দিন। এরপর তিনজনে হাসানের দেহ পলিথিনে মুড়ে একটি ট্রলি ব্যাগে ভরে। ট্রলিটি একটি বস্তায় মুড়ে ফেলা হয়।

মঙ্গলবার ভোর ৫-৪৮ মিনিটে তহিজুদ্দিন নিজে রামনগর স্টেশনে দিঘা-পাঁশকুড়া লোকালে বস্তা ভর্তি ব্যাগটি তুলে দেয় বলে দাবি পুলিশের। ব্যাগটি চালকের ঠিক পরের কামরাতেই রাখা ছিল। ওই দিন ট্রেনটি পাঁশকুড়া স্টেশন থেকে যায় সাঁতরাগাছি পর্যন্ত। তারপর সাঁতরাগাছি থেকে লিলুয়া। লিলুয়া থেকে ফের হাওড়া হয়ে সেটি রাত ৯-৫০ মিনিটে মেচেদায়। রাতে কারশেডে বস্তাটি নজরে আসে সাফাই কর্মীদের। পরে থানায় সেই বস্তা খুলে হাসানের দেহ পাওয়া যায়।

ঘটনার পর থেকে তহিজুদ্দিন এলাকা ছাড়া ছিল। তার মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে জিআরপি পুলিশ জানতে পারে, সে মারিশদা এলাকায় একটি বাসে করে যাচ্ছে। সোমবার বিকেলে সাধারণ পোশাকে পাঁশকুড়া জিআরপি থানার একটি দল সেই বসে ওঠে এবং তহিজুদ্দিনকে ধরে। মঙ্গলবার সকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সমাজ মাধ্যমে হাসানের ছবি দেখে চিনতে পারেন পরিজন। তাঁরা জানান, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে হাসানের মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। ওই দিনই হাসানের পরিজন পাঁশকুড়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন। কিন্তু দেহ উদ্ধারের পরে তাঁরা কোনও খুনের অভিযোগ দায়ের করেননি।

কী কারণে খুন হতে হল হাসানকে?

পাঁশকুড়া জিআরপি সূত্রের খবর, হোটেল লিজ নেওয়ার ব্যাপারে তহিজুদ্দিন-সহ চারজন দালাল লিঙ্ক ম্যান ছিল। সম্ভবত সেই লিজের কমিশন নিয়ে হাসানের সঙ্গে ঝামেলার জেরে তাঁকে খুন করা হয়েছে। পাঁশকুড়া জিআরপি থানার ওসি অসীম পাত্র বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে ব্যবসায়িক শত্রুতাই খুনের কারণ বলে মনে হচ্ছে। ধৃতকে হেফাজতে পেয়ে তদন্ত করলে বাকি তথ্য পাওয়া যাবে।’’ এদিন তহিজুদ্দিনকে তমলুক আদালতে তোলা হলে বিচারক ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement