কাঁসার থালা, বাটিতে পরিবেশন করা হবে নববর্ষের ভোজ। নিজস্ব চিত্র
ঘরোয়া খাবারে আগ্রহ। কিন্তু খাওয়াটা হবে না ঘরে। বেশ কয়েক বছর ধরেই নববর্ষে বাঙালির বাসনা ও রসনা এমন দিকেই বাঁক নিয়েছে। সেই বাঁক বোঝেন অতিথি আপ্যায়নকারীরা। বছরের প্রথম দিনে ঘুরতে আসা পর্যটকদের রসনা তৃপ্তির আয়োজন তাই একেবারে নিখাদ বাঙালিয়ানায়। বাঙালিয়ানার ছোঁয়া থাকবে পাতের পদে। থাকবে খাবার পাতায়। মানে পাত্রেও। অতিথি বরণে তৈরি ঝাড়গ্রাম জেলার হোম-স্টে ও রিসর্টগুলো। সরকারি অতিথিশালাতেও থাকছে বাঙালিয়ানার খাবার।
বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত টানা চারদিন ছুটি। ভিড়ে ঠাসা অরণ্যসুন্দরী ঝাড়গ্রাম। কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক স্বীকৃত ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজমের কর্ণধার সুমিত দত্ত বলছেন, ‘‘গত এক দশকে ঝাড়গ্রাম জেলায় নববর্ষে এত পর্যটক আসেননি। এবার এক মাস আগে সমস্ত রিসর্ট, হোমে-স্টে, অতিথিশালা বুকিং হয়ে গিয়েছে। বহু মানুষ আসতে চেয়ে ফোন করেছেন।’’ বিপুল সংখ্যক অতিথিরা নতুন বছরের প্রথম দিনে পাবেন ঘরের খাবারের স্বাদ।
বিভিন্ন হোম-স্টের পাশাপাশি পর্যটন উন্নয়ন নিগমের রাজবাড়ি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সে দুপুরে খাবারে থাকছে বিশেষ আয়োজন। করা হবে ঝুরো আলুভাজা, পোস্ত বড়া, শুক্তো, ঝিঙে আলু পোস্ত, মুরগির বা খাসির মাংস। পাতে পড়বে পায়েসও। পর্যটক ছাড়া অন্যরাও দুপুরের আহার বাইরে করতে পারবেন। তবে সে জন্য তাঁদের আগাম বুকিং করতে হবে। ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সের ম্যানেজার নিমাই ঘটক বলেন, ‘‘বাংলা নববর্ষ বলেই দুপুরে খাবারের মেনুতে পোস্ত বড়া, শুক্তো, ঝিঙে আলু পোস্ত ও পায়েস যোগ করা হয়েছে। কারণ, এই দিনটিতে পর্যটকেরা এ ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করেন।’’
ঝাড়গ্রাম ব্লকের গড় শালবনিতে একটি রির্সটও বাঙালিয়ানাতেই আস্থা রেখেছে। রিসর্টে মোট ৬০ জন থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। রিসর্টের মালিক প্রতীক মাহাতো বলেন, ‘‘দুপুরে ভাতের সঙ্গে আলু ভাজা, উচ্ছে ভাজা, আম ডাল, এঁচোড়ের তরকারি, পটলের তরকারি, মাছ ও কচি পাঁঠার ঝোল থাকছে। সঙ্গে আমের চাটনি, দই ও মিষ্টি থাকবে।’’ খাবার পরিবেশন করা হবে কাঁসার থালা, বাটি, গ্লাসে। প্রতীকের দাবি, ‘‘এক মাস আগেই রিসর্টের সব রুম বুকিং হয়ে গিয়েছে। তার পরও প্রতিদিন বুকিংয়ের জন্য ফোন এসেছে। আগে কোনও দিন নববর্ষে পর্যটকদের চাহিদা থাকেনি।’’
আবার বেলপাহাড়ি-ঝাড়খণ্ড সীমানায় আমলাশোলে খড়ের চালের ছাউনি দেওয়া হোম-স্টে চালু হয়েছে গত বছর। সেখানে নববর্ষের দিনে ২০ জন পর্যটক আসছেন। প্রত্যন্ত এলাকায় বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করেছেন হোম স্টে কর্তৃপক্ষ। আমলাশোলের হোম-স্টের কর্ণধার সায়ন্তনী দত্ত ও মধুরিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নববর্ষের জন্য দুপুরে অন্যরমক আয়োজন করেছি। দুপুরে ভাতের সঙ্গে উচ্ছে ভাজা, আলু ভাজা, বেগুন ভাজা, টক ডাল, দু’ধরনের তরকারি, রুই অথবা কাতলা মাছ। সঙ্গে চাটনি, মিষ্টি ও পাঁপড় থাকবে। আমলাশোলের মতো এলাকায় আনাজ সেরকম মেলে না। তাই বৃহস্পতিবার স্থানীয় হাট থেকে বাজার করা হয়েছে।’’ খাবার পরিবেশন করা হবে শালপাতার থালা, বাটিতে। জলের পাত্রটি হবে সেরামিকের। ভাঁড়ের আকারে। পাত্রের গায়ে থাকবে আদিবাসী চিত্রকলার ছোঁয়া।
নববর্ষের দিনে পর্যটকদের কেউ কেউ পান্তা ভাত খেতে পছন্দ করেন। কিছু কিছু হোম-স্টে পান্তা ভাতের ব্যবস্থা করছে। গরমটা প্রবল হয়েছে এর মধ্যেই। পান্তা ভাতে বাঙালিয়ানার কলজে শীতল হবে পর্যটকদের। আশা করছেন আয়োজকেরা।