কন্ট্রোল রুমে পীযূষ। —নিজস্ব চিত্র।
দ্বিতীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। মহাশূন্যে হারিয়ে গিয়েছিল ভারতের চন্দ্রযান-২। তাই এবার নিরাপদে চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটিতে পা রাখার পরেই উচ্ছ্বাসে মাতলেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসোরা’র বিজ্ঞানীরা। আর তাঁদের পাশে থেকেই সেই আনন্দ ভাগ করে নিলেন পাঁশকুড়ার বিজ্ঞানী পীযূষকান্তি পট্টনায়ক। তবে বুধবার ইসোরোর কন্ট্রোল রুম থেকে আবেগ ঘন পীযূষ জানলেন, তাঁদের কাজ এখনও শেষ হয়নি।
চন্দ্রযান ৩-এর অবতরণ নিয়ে টানা ৪৩ দিন আশা এবং উৎকণ্ঠায় দিন কাটিয়েছেন ইসোর বিজ্ঞানীরা। অবশেষে বুধবার নিরাপদেই চাঁদে পৌঁছেছে ‘ল্যান্ডার বিক্রম’। এই যানের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন পাঁশকুড়ার ঘোষপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার উত্তর কাঁটাল গ্রামের বাসিন্দা পীযূষ।বছর একত্রিশের পীযূষ ২০১৫ সালে ইসরো’তে যোগ দেন। তিনি চন্দ্রযান-২ অভিযানের সময়ও যানের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন। এবার সেই একই দায়িত্ব পালন করেছেন এবং যানের সফল অবতরণের পরে গর্ব বোধ করছেন।
এ দিন পীযূষ বলেন, ‘‘কন্ট্রোল রুমে কার্যত উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে। সবাই বন্দেমাতরম, ভারত মাতা কি জয় স্লোগান দিচ্ছেন। তবে আমাদের কাজ এখনও শেষ হয়নি। বিক্রম এখন আমাদের ছবি তুলে পাঠাবে। অবতরণের ঘণ্টা তিনেক পর বিক্রমের পেট থেকে রোভার প্রজ্ঞানকে বের করতে হবে। প্রজ্ঞানেরও তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব আমাদের।’’
চন্দ্রযান-৩ অভিযানে পীযূষের যুক্ত থাকার খবর সামনে আসার পর তাঁর বাড়ির এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। আর আশা ও উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন দশেক আগেই বেঙ্গালুরুতে ছেলের বাসায় গিয়ে পৌঁছছেন পীযূষের বাবা এবং মা। সেখানে স্ত্রী ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে থাকেন পীযূষ। পীযূষের বাবা রাধাকান্ত পট্টনায়ক সেচ দফতরের অবসর প্রাপ্ত কর্মী। মা অনিমা গৃহবধূ। ছেলের কাজে উচ্ছ্বসিত বাবা-মা'ও। তাঁরা জানাচ্ছেন, এদিন ভোর সাড়ে ৫ টার সময় বাড়ি থেকে ইসরোর কন্ট্রোলরুমের চলে যান পীযূষ। আর তাঁরা দুপুর থেকে টিভির পর্দায় চোখ রেখে বসেছিলেন। সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে টিভির পর্দায় চন্দ্রযানের সফল অবতরণ দেখার পর রাধাকান্ত পট্টনায়ক বলেন, ‘‘দেশবাসী হিসাবে গর্ব বোধ করছি। আর নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। কারণ, এরকম একটি সফল মহাকাশ অভিযানের শরিক আমার ছেলে।’’ পীযূষের স্ত্রী ঐন্দ্রিলা বলেন, ‘‘চন্দ্রযান ৩ উৎক্ষেপণের পর থেকে দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা করে কন্ট্রোল রুমে থেকেছেন আমার স্বামী। এ দিন ভোর সাড়ে ৫ টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রম সফল হয়েছে। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’’