Physically Disable

মহিলাদের স্ব-নির্ভরতার দিশারি প্রতিবন্ধী দম্পতি

কর্মসংস্থানে সত্যিকারের জীবিকার দিশা নিয়ে এসেছেন এই প্রতিবন্ধী দম্পতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:১৪
Share:

নিজের কারখানায় সস্ত্রীক বলরাম। নিজস্ব চিত্র

নিজেরা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। অথচ এলাকার তিরিশ জন মহিলাকে স্ব-নির্ভর করে তাঁদের নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পাঁশকুড়ার দম্পতি বলরাম মাইতি ও কৃষ্ণা মাইতি। আট বছর ধরে পোশাক তৈরি করার কাজ করছেন এঁরা। তবে তা কেবল ছোট ছোট মূর্তি, প্রতিমার জন্য। যা শুধু ভিন রাজ্য নয়, পাড়ি দিচ্ছে বিদেশেও। কর্মসংস্থানে সত্যিকারের জীবিকার দিশা নিয়ে এসেছেন এই প্রতিবন্ধী দম্পতি।

Advertisement

পাঁশকুড়ার চাঁইপুর গ্রামের বাসিন্দা বলরাম জন্ম থেকে অস্থি সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন। আশি শতাংশ প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না তিনি। রঘুনাথবাড়ি রামতারক হাইস্কুল থেকে ১৯৯৫ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। স্কুলে পড়ার সময় স্থানীয় এক দর্জির কাছে জামা-কাপড় সেলাই ও তৈরির কাজ শিখেছিলেন। অনেক চেষ্টা করেও জোটেনি চাকরি। যা নিয়ে অশান্তি ছিল পরিবেরে। মনের অদম্য জেদ নিয়ে চাঁইপুর বৃন্দাবালা বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে খোলেন দর্জির দোকান। কিন্তু ছেঁড়া জামা-কাপড় সেলাই করে ক’টাকা রোজগার হয়? অগত্যা আট অছর আগে জীবিকার খোঁজে কলকাতায় আসেন বলরাম। এক ব্যবসায়ীর পরামর্শে শুরু করেন ছোট ছোট পিতলের প্রতিমার পোশাক তৈরির কাজ। বলরামের হাতের মুন্সিয়ানায় বাড়তে থাকে কাজের বরাত। ধীরে ধীরে দোকানেই গড়ে তোলেন কারখানা। কিন্তু একার পক্ষে বিপুল কাজের চাপ সামলানো সম্ভব নয়। তাই শুরু করেন মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। এই মুহূর্তে পাঁশকুড়া ও কোলাঘাট ব্লকের তিরিশ জন মহিলা বলরামের কারখানায় কাজ করেন। এঁদের কারও মাসিক আয় দু’হাজার, কারও তিন হাজার টাকা। বছর তিনেক আগে বলরাম বিয়ে করেন পোলিও আক্রান্ত কৃষ্ণাকে। সোজা হাঁটতে পারেন না তিনিও। দশ মাসের শিশুপুত্রকে কোলে নিয়েই স্বামীর সঙ্গে কাজে তাল মেলান তিনি। সমস্ত খরচ মিটিয়ে বলরামের হাতে কোনও মাসে থাকে দশ কোনও মাসে পনেরো হাজার টাকা। কোলাঘাটের চিত্রা গ্রামের মণিমালা প্রধান বলেন, ‘‘বাড়ির কাজ সামলে বলরামদার কারখানায় কাজ করে মাসে আড়াই-তিন হাজার টাকা আয় করি। আমার সংসারেও সুবিধা হয়েছে।’’ বলরামের ছোট ভাই অপূর্বও দাদাকে কাজে সাহায্য করেন।

জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘সত্যিই প্রশংসনীয়। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ না হয়েও ওঁরা যে ভাবে এতজন মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন তা দৃষ্টান্ত। ওঁদের কোনও সরকারি সহায়তার দরকার হলে তা করা হবে।’’ আর বলরামের কথায়, ‘‘নিজে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারি না। তবে মনের জোরে আজ নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি অন্তত কিছু মানুষের অন্নের সংস্থান করতে পেরেছি। এটা ভেবে ভাল লাগে।’’

Advertisement

চারপাশে কর্মসংস্থানে ভাটার ছবিতে আশার আলো জাগিয়েছে বলরাম ও কৃষ্ণার এই উদ্যোগ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement