২০ জনের মৃত্যু অতীত, নিষেধাজ্ঞা উড়িয়েই রূপনারায়ণে যথেচ্ছ নৌকাবিহার

ওই নিষেধাজ্ঞা থেকে গিয়েছে খাতায় কলমেই। বাস্তব চিত্রটা অন্য। কোলাঘাটে কোনও রকম যাত্রী সুরক্ষা ছাড়াই রমরমিয়ে চলছে পর্যটকদের নৌকা বিহার। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৪৯
Share:

বিপজ্জনক: প্রজাতন্ত্র দিবসে রূপনারায়ণে নৌকাভ্রমণ। নিজস্ব চিত্র।

এক দশক আগে রূপনারায়ণ বক্ষে বিহারের সময় উল্টে গিয়েছিল পর্যটকদের নৌকা। মৃত্যু হয়েছিল ২০ জনের। ওই দুর্ঘটনার পরে কোলাঘাটে রূপনারায়ণে নৌকাভ্রমণে নিষেধাজ্ঞ জারি করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।

Advertisement

ওই নিষেধাজ্ঞা থেকে গিয়েছে খাতায় কলমেই। বাস্তব চিত্রটা অন্য। কোলাঘাটে কোনও রকম যাত্রী সুরক্ষা ছাড়াই রমরমিয়ে চলছে পর্যটকদের নৌকা বিহার।

প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে কোলাঘাটের একটি বেসরকারি শরীরচর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছিল রূপনারায়ণের পাড়ে। আর চড়ুইভাতিতে যোগ দিতে আসা পিকনিক পার্টির লোকজনকে নদীতে দু’টি দাঁড় টানা নৌকায় ঘুরতে দেখা গেল দিনভর। তাঁদের গায়ে না ছিল লাইফ জ্যাকেট, না ছিল নিরাপত্তা সংক্রান্ত অন্য কোনও সামগ্রী। ভরা জোয়ারের সময় যেভাবে নৌকোগুলি প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে সারাদিন ধরে দাপিয়ে বেড়াল তাতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার মানুষজন। সরস্বতী পুজোতেই একই ছবি দেখা গিয়েছে নদীতে।

Advertisement

স্থানীয় সূ্ত্রের খবর, ২৬ জানুয়ারি দু’টি আনুমানিক ৪৫ জন পর্যটক দাপিয়ে বেড়ায় রূপনারায়ণে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ নৌকা থেকেই ভ্রমণের ভিডিয়ো ফেসবুকে লাইভ করেন। ওই সংস্থার কর্ণধার নির্মল খাঁড়াও নিজের ফেসবুকে সেই ছবি ও ভিডিয়ো পোস্ট করেন। তাতে দেখা গিয়েছে, কোনও নিরাপত্তা ছাড়াই নৌকাভ্রমণ উপভোগ করেছেন পুরুষ এবং মহিলারা। তাদের কোলে রয়েছে শিশুও। রূপনারায়ণের পাড়ের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘২০১০ সালে ঠিক যে জায়গায় নৌকাডুবির হয়েছিল, রবিবার সেই জায়গাতেই দুটি নৌকা করে একটি পিকনিক পার্টি একাধিকবার চক্কর মারে। প্রতিটি নৌকায় ২০ জনের বেশি যাত্রী ছিল। এটা খুবই বিপজ্জনক।’’

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি কলকাতার উল্টোডাঙা থেকে আসা একটি পর্যটক দলের নৌকা ডুবে যায় কোলাঘাট রেল সেতুর কাছে। ওই সময় বেশ কয়েকজন শিশু-সহ নৌকায় ছিলেন পিকনিক দলের ২৫ জন পুরুষ। পাঁচজন সাঁতরে পাড়ে উঠতে পারলেও ডুবে যান ২০ জন। পরে ১৯ জনের দেহ উদ্ধার হয়। একজন নিখোঁজ থেকে যান। সেই থেকে কোলাঘাটে নৌকা বিহার বন্ধ করে দেয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। কিন্তু অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে প্রজাতন্ত্র দিবস ছাড়াও অন্য সময়েও নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নৌকাভ্রমণে মেতে ওঠেন পর্যটকেরা।

বুধবারও একটি পিকনিক দল রূপনারায়ণে নৌকাভ্রমণ করেছিল বলে অভিযোগ। রবিবার যে শরীরচর্চা কেন্দ্রের তরফে ওই নৌকাভ্রমণ হয়েছিল, তার কর্ণধার নির্মল খাঁড়া বলেন, ‘‘আমরা নিজেদের নৌকা নিয়ে গিয়েছিলাম।’’ ব্যক্তিগত নৌকা কি প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞার বাইরে? নির্মলের সাফাই, ‘‘আমরা মাঝ নদীতে যাইনি। নদীর ধার বরাবর ঘুরেছিলাম।’’ যদিও ফেসবুকে আপলোড করা ভিডিয়ো বলছে অন্য কথা।

বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় প্রচার চালায় কোলাঘাট থানার পুলিশ। এ বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘ওখানে নৌকাভ্রমণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে আমি কোলাঘাট থানার সঙ্গে কথা বলব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement