চোলাইয়ে ভেসেছে সংসার

কঠিন শাস্তি চায় ময়না

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার কিয়ারানা বাজার ও আশপাশের গ্রামে চোলাই খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল ২৫ জনের। বাসিন্দাদের ক্ষোভের আগুনে পুড়েছিল চোলাই ব্যবসায়ীদের ঠেক ও বাড়ি।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১৭
Share:

কিয়ারানা গ্রামে বিষ মদ কাণ্ডে মৃত মানিক ধরের পরিবার। ফাইল চিত্র।

টিভির পর্দায় নদিয়ার শান্তিপুরে বিষাক্ত চোলাই খেয়ে ৮ জনের মৃত্যুর ছবিটা তিন বছর আগের ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছিল কিয়ারানার মানুষকে। চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল চোলাই খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া ২৫টা মুখ।

Advertisement

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার কিয়ারানা বাজার ও আশপাশের গ্রামে চোলাই খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল ২৫ জনের। বাসিন্দাদের ক্ষোভের আগুনে পুড়েছিল চোলাই ব্যবসায়ীদের ঠেক ও বাড়ি। পুলিশ গ্রেফতার করেছিল মানিক রুইদাস, দুলাল বিষয়ী-সহ ৯ জন চোলাই ব্যবসায়ীকে। ধৃতদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুন এবং বিষাক্ত চোলাই মদ বিক্রির অভিযোগে মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ। ওই মামলায় একজন অভিযুক্ত জামিন পেলেও বাকিরা এখনও জেল হেফাজতে। পুলিশ চার্জশিট দেওয়ার পরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ এখনও শেষ হয়নি। অভিযুক্তদের কঠিন সাজা দেবেন বিচারক, এই আশাতেই দিন গুনছে মৃত রাধানাথ মণ্ডল, দুলাল মণ্ডল, রাধানথ মণ্ডল, দীপক সিংহ, মানিক ঢলের পরিবার। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে ২০১১ সালে বিষমদ কাণ্ডে মারা গিয়েছিলেন ১৭৩ জন। ঘটনার সাত বছর পর ওই মামলায় চার জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে।

ময়নার আড়ংকিয়ারানা গ্রামের একই পাড়ার বাসিন্দা রাধানাথ, দুলাল, সহদেব। গাছ কাটার কাজ করে সংসার চালাতেন বছর পয়তাল্লিশের রাধানাথ। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে টেনেটুনে চলত সংসার। ঘরের একমাত্র রোজগেরে রাধানাথের আচমকা মৃত্যু এক ধাক্কায় বদলে দিয়েছে পরিবারকে। মেয়ে সুপ্রিয়া নবম শ্রেণিতে ছেলে সুজিত অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। বাবার মৃত্যুর পর পড়া ছেড়ে সুজিতকে দিনমজুরি করতে হচ্ছে। স্ত্রী করুণাদেবী বলেন, ‘‘সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর স্বামী বাজারে গিয়ে মদ খেত। কিন্তু তাতে যে এমনভাবে মৃত্যু হবে ভাবতে পারিনি। সংসারটা ভেসে গেল।’’ একই দশা দুলাল, সহদেবের পরিবারের। দুলালের ছেলে রাজু মণ্ডল এখন আনাজ ব্যবসা করে সংসার চালান।

Advertisement

বিচারের আশায় মৃত দীপক সিংহর শোকার্ত পরিবার। নিজস্ব চিত্র

নদিয়ার শান্তিপুরে বিষ মদে ৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা শুনে রাজু বলেন, ‘‘আমাদের এখানে কিয়ারানা বাজারে দীর্ঘদিন ধরে চোলাইয়ের ঠেক চলছিল। পুলিশ-আবগারি দফতর সব জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি। যার ফলে এতগুলো গরিব মানুষের প্রাণ চলে গেল। তাই প্রশাসনেকর কাছে দাবি, চোলাই ব্যবসায়ীদের যেন কঠোর শাস্তি হয়।’’

কিয়ারানা গ্রামের শঙ্খ বাইচার আনাজ ব্যবসা করতেন। চোলাই খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল বছর বাহান্নের শঙ্খের। স্ত্রী ফুটকি এখন স্বামীর ব্যবসা চালিয়ে মেয়েকে মানুষ করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘একমাত্র রোজগেরে লোকটা চলে গেল। সংগ্রামপুরের ঘটনায় অনেকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেল। অথচ আমরা কোনও সরকারি সাহায্য পেলাম না। বাধ্য হয়ে পেট চালাতে আনাজ ব্যবসা শুরু করেছি। স্বামীর মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের যেন কঠিন শাস্তি হয়।’’

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, চোলাই খেয়ে এতগুলি মানুষের মৃত্যুর পরে বাজারে চোলাইয়ের ঠেক বন্ধ হলেও চোলাই ব্যবসা চলছেই।

জেলার আবগারি সুপার মানিক সরকারের অবশ্য দাবি, ‘‘বেআইনিভাবে মদের ব্যবসার বিরুদ্ধে জেলাজুড়ে নিয়মিতভাবে অভিযান চলছে। গত দু’দিনে মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৫৮ লিটার চোলাই এবং এক হাজার লিটার চোলাই তৈরির কাঁচামাল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement