এক্সাইড কারখানার পুজোর মণ্ডপ। ছবি: আরিফ ইকবাল খান ও পার্থপ্রতিম দাস
শিল্পশহরে বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে দর্শনার্থীর ঢল নামল শনিবার। করোনার কারণে গত দু’বছরে কার্যত সে অর্থে বড় বাজেটের পুজো হয়নি শিল্পশহরে। স্বভাবতই এবার সেই দু’বছরের খামতি পূরণে এবার উদ্যোগী ছিলেন পুজো উদ্যোক্তা থেকে আমজনতা। মণ্ডপের বাজেট কোথাও কোথাও ১০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। পুজোর থিমে উঠে এসেছে নানা বৈচিত্রও।
এদিন সকাল থেকেই অন্য জেলা থেকেও একাধিক বাস আসে শিল্প শহরে। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হলেও মণ্ডপগুলির আশেপাশে ভিড় জমেছে ভালই। সেই ভিড়ে এইচ পি এল লিঙ্ক রোড-সহ একাধিক রাস্তায় একসময় যানজট তৈরি হয়। নন্দীগ্রাম থেকে পুজো দেখতে এসেছিলেন স্বপন মণ্ডল, খোকন দাস। তাঁরা বলছেন, ‘‘টোটো ভাড়া করে বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরছেন। তবে বিভিন্ন জায়গায় যানজটের শিকার হচ্ছি। এবার খুব নাকাল হলাম।’’ হলদিয়ায় রিফাইনারি কাছে দুটি বড় মাপের পুজো হচ্ছে। সেখানে রাস্তা খারাপের জন্য ভুগতে হচ্ছে পুজো দেখতে আসা আমজনতাকে। হলদিয়া রিফাইনারি-১ নম্বর গেটে দুটি পুজো হচ্ছে। সেই পুজোর উদ্বোধন এ দিন করেন হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের (এইচডি) চেয়ারম্যান জ্যোতির্ময় কর, আইএনটিটিইউসি-র জেলা (তমলুক) সভাপতি শিবনাথ সরকার এবং ইন্ডিয়ান অয়েলের আধিকারিকেরা। মশারি বিতরণ করা হয়েছে পুজো মণ্ডপ থেকে।
রিফাইনারির অন্য একটি মণ্ডপে থিম হয়েছে পুরুলিয়ার ছৌ নৃত্য। টাটা স্টিলের পুজোর মণ্ডপে আলোর খেলা দেখতে ভিড় করেছেন বহু দর্শনার্থী। এই মণ্ডপে নজর কেড়েছে বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যবস্থা-সহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কমিটির সদস্যরা জানান, এই প্যান্ডেলের কাপড় অগ্নিরোধী। ব্যাটারি সংস্থা ‘এক্সাইডে’র পুজোও দর্শক টেনেছে ভালই। ‘প্যাগোডা’র আদলে মণ্ডপ এই পুজোর। হলদিয়া এনার্জি লিমিটেডের পুজোর থিম ছিল ‘স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব’। এ দিন অল্প বিস্তর বৃষ্টিও হয়েছে। তাতে ‘সাউথ এশিয়ান ধান সিঁড়ি’র মণ্ডপে জলকাদা জমে যায়। দর্শনার্থীরা অসুবিধায় পড়েন। পুজোয় শিল্পশহরের টাউনশিপ এলাকায় হলদিয়া থানার নাগালের মধ্যেই ডিজে বাজানোরও অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্বকর্মা পুজোর রাতে মদ্যপ এবং বেপরোয়া গতির মোটরবাইকের দাপটে রুখতে এগরা মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় নাকা তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রের খবর, বিশ্বকর্মা পুজোর সন্ধ্যা থেকেই এগরা শহর, কুদি, আলংগিরি এবং পটাশপুরে একাধিক রাজ্য সড়কে মদ্যপ বাইক আরোহীদের দৌরাত্ম বাড়ে। গত বছর পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুর থেকে এই পুজোর রাতেই এগরায় এসে মদ্যপান করে ফেরার পথে বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক জনের। তাই এবার রাতে দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা এবং রাজ্য সড়কে তিনমাথার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার্সরা মোতায়েন করে যাননিয়ন্ত্রন করা হয়েছে। রাতে পুলিশের টহল দারি ভ্যানের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। জেলার সীমানা এলাকায় আলংগিরি ও ভগবানপুর এবং দেহাটি রাজ্য সড়কে পুলিশের নাকা চেকিং চলছে। বেপরোয়া গতির মোটরবাইক দেখলে দাঁড় করিয়ে ‘স্পট ফাইন’ করছে পুলিশ। এগরার এসডিপিও মহম্মদ বৈদ্যুজ্জামান বলেন, ‘‘অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে রাস্তায় বেপরোয়া গতির গাড়ি নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়েছে। সীমানা এলাকায় নাকা চেকিং করা হচ্ছে।’’
এদিকে, এগরা শহরে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এলাকায় ‘ট্যাক্সি ইউনিয়নে’র বিশ্বকর্মা পুজোয় জোরে ডিজে বাজানো হচ্ছিল বলে অভিযোগ। এগরা থানার পুলিশ গিয়ে ওই ডিজে বাজানো বন্ধ করে। এর প্রতিবাদে ট্যাক্সি ইউনিয়নের সদস্য সন্ধ্যায় এগরা শহরে রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন। আধ ঘণ্টা অবরোধের জেরে থমকে যায় যানচলাচল ব্যবস্থা। পুলিশ গিয়ে পথ অবরোধ তুলে দেয়।