বীরসিংহ বাসস্ট্যান্ডের বর্তমান অবস্থা এরকমই। নিজস্ব চিত্র
গ্রামবাসীর ‘অসন্তোষ’ মেটাতে সোমবার বিকেলে বীরসিংহ গ্রামে গেলেন ঘাটালের মহকুমাশাসক অসীম পাল। কথা বললেন স্থানীয়দের সঙ্গে। ক্ষোভের আঁচ টের পেলেন তিনিও।
এ দিন বীরসিংহ লাইব্রেরিতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এলাকার মানুষ তাঁর কাছে গ্রামে মহিলা কলেজ, রাস্তাঘাট উন্নয়নের দাবি জানান। মহকুমাশাসক অসীম পাল বলেন, ‘‘সামনে দুশো বছর পূর্তি উপলক্ষে বীরসিংহ গ্রামে অনুষ্ঠান হবে। মুখ্যমন্ত্রী আসবেন। এলাকার মানুষ আমার সঙ্গে দেখা করে দাবি-দাওয়া জানিয়েছেন। তাঁদের কথা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে।’’
এ বার একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, বিদ্যাসাগরের দু’শো বছরের জন্মদিবসে বীরসিংহে থাকবেন তিনি। তার প্রস্তুতি দেখতে ২৭ অগস্ট বীরসিংহ ঘুরে গিয়েছেন জেলাশাসক। রবিবার সেই সভার জন্য প্রস্তুতি বৈঠক ডাকা হলেও সেখানে বিধায়ক আসেননি। তারপরেই বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান কেন উপেক্ষিত, কেন বিধায়ক অনুপস্থিত—বিক্ষোভকারীরা সেই প্রশ্ন তোলেন। তৃণমূলের পার্টি অফিস দখল করে বিজেপি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের ক্ষোভ, বাম আমলেও এই গ্রামের কোনও উন্নতি হয়নি। পরিবর্তনের পরে তৃণমূল সরকারেও আশ্বাস দিয়ে কথা রাখেনি। গ্রাম পরিচালন কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক দেবিদাস মুখোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “ছোট থেকেই শুনছি আমাদের গ্রাম আদর্শ গ্রাম হবে। কিন্তু বিদ্যাসাগর জন্মের দু’শো বছর পরেও তা হল না!” গ্রাম কমিটির বর্তমান সম্পাদক অসীম মণ্ডলের প্রশ্ন, “বিদ্যাসাগর তো গরিব ঘরের লোক ছিলেন। তার জন্যই কী তাঁর জন্মস্থানকে এই অবহেলা?” তরুণ চৌধুরী নামে এক গ্রামবাসীর আক্ষেপ, “বিদ্যাসাগর দেড়শো বছর আগে বাংলায় নবজাগরণ এনেছিলেন। কিন্তু আমাদের এলাকা আর জাগল না!”
বীরসিংহ গ্রামে অনেক রাস্তাই খারাপ। ঢালাই রাস্তা নেই। পথবাতি নেই। পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়। বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দির, বিদ্যাসাগর নামাঙ্কিত বীরসিংহ বালিকা বিদ্যাপীঠ পরিকাঠামোগত নানা সমস্যায় ধুঁকছে। বীরসিংহ ভগবতী হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই। গ্রামে ঈশ্বরচন্দ্র নামাঙ্কিত আই টি আই কলেজের নাম বদলে ঘাটাল আই টি আই করে দেওয়ার মতো বিষয়েও ক্ষোভ বাড়ছিল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিদ্যাসাগরের পরিবারের পুকুরের মাটি চুরি-সহ সরকারি নানা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ।
রবিবার সন্ধ্যায় বিজেপির হাতে দখল হয়ে পার্টি অফিস অবশ্য ওই রাতেই তৃণমূলের হাতে ফিরে এসেছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বিজেপির নাম না করে দাবি করেন, “কোনও কোনও রাজনৈতিক দল গ্রামবাসীদের একাংশকে উস্কে দিয়ে বিক্ষোভ করাচ্ছে।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে গোটা রাজ্যে উন্নয়ন হয়েছে। বীরসিংহ গ্রামেও হবে।” গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের পিছনে দলের হাত নেই বলে পাল্টা দাবি করেছেন বিজেপির ঘাটাল জেলা সাংগাঠনিক সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, “গ্রামবাসীদের স্বতঃফূর্ত আন্দোলনে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই।”