Ratha Yatra

রথের রশি টানতে হাতে হাত হিন্দু-মুসলিম

সোমবার ডেমুরিয়া রথের মেলার প্রাথমিক প্রস্তুতি বৈঠক হয়েছে। নতুন নিয়মে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার জন্য তিনটি নতুন রথ বানানো হচ্ছে। যার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ওই রথের ভিতর অনেক উঁচুতে বসবেন জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা।

Advertisement

কেশব মান্না

রামনগর শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৪ ০৯:০২
Share:

রথ মেলার প্রস্তুতি। —নিজস্ব চিত্র।

রথের দিনে ব্যস্ততার শেষ থাকে না ওয়াসিম রহমানের। রামনগরের ডেমুরিয়ার ৩০০ বছরের প্রাচীন এই রথযাত্রার যাবতীয় আয়োজন তাঁকে ছাড়া হবেই না। শুধু ওয়াসিম নন, রামনগরের ডেমুরিয়ার বহু প্রাচীন এই রথযাত্রায় মেতে ওঠেন এলাকার হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ।

Advertisement

সোমবার ডেমুরিয়া রথের মেলার প্রাথমিক প্রস্তুতি বৈঠক হয়েছে। নতুন নিয়মে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার জন্য তিনটি নতুন রথ বানানো হচ্ছে। যার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ওই রথের ভিতর অনেক উঁচুতে বসবেন জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা।

ডেমুরিয়া রথের মেলা নিয়ে নানা গল্প ছড়িয়ে রয়েছে কাঁথির মানুষের মধ্যে। তিনশো বছর আগে বর্তমান এগরা থানার বাসুদেবপুরের জমিদার লক্ষ্মীকান্ত রায়ের দান করা জায়গার উপর জগন্নাথদেবের মন্দির স্থাপিত হয়। আর সেই বছর থেকে শুরু রথযাত্রাও। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ তমালতরু দাসমহাপাত্র বলেন, ‘‘জমি দানের আগেও ডেমুরিয়াতে জগন্নাথ দেবের মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল। জগন্নাথদেবের বিগ্রহ ছাড়াও প্রচুর স্বর্ণালঙ্কার ও ধনসম্পদও ছিল মন্দিরে। সেই ধনসম্পদের লোভে মারাঠা দস্যু বা বর্গীরা বারবার মন্দিরের উপর আক্রমণ করে ধনসম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। বারবার বর্গীদের আক্রমণে জগন্নাথ মন্দিরটিও ধ্বংস হয়ে যায়। পরে রাজা লক্ষ্মীকান্ত রায়ের দান করা জমির উপর মন্দির স্থাপন করা হয়।’’

Advertisement

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নিয়মানুসারেই ডেমুরিয়া জগন্নাথ মন্দিরের পূজার্চনা হয় বলে জানিয়েছে মন্দিরের ট্রাস্টি কমিটি। রথযাত্রা উপলক্ষে প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্ত মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে স্থানীয় মৈতনা গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে রথের মেলা বসে। শুরু থেকেই এই রথযাত্রার আয়োজনে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ যোগ দিতেন। কখনই এতে সম্প্রীতির সুর কাটেনি।

রথের দিনে জগন্নাথ দেবকে অধিষ্ঠিত করা হয়। সে সময়ে পুজোর কাজে সাহায্য করেন ফারুক, নেশারেরা। রথের রশিতে হিন্দুদের পাশাপাশি টান দেন মুসলিম সম্প্রদায়ও। তাঁদের মিলিত হাতের রশির টানে জগন্নাথ দেবের রথ পৌঁছে যায় মাসির বাড়ি। সেখানে সাত দিন থাকার পরে একই ভাবে রথ ফিরে আসে বাড়িতে। উল্টোরথেও দেখা যায় সম্প্রীতির একই ছবি।

মেলা কমিটির সহ-সম্পাদক ওয়াসিম রহমান। তাঁর কথায়, ‘‘মেলায় দোকানপাট বসানো থেকে শুরু করে তা পরিচালনা করা, সবই হিন্দু-মুসলমান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বহু বছর ধরে করে আসছেন।’’ এবার রথের পরের দিন মহরম। ডেমুরিয়ার যে মাঠে রথের মেলা বসে তার অদূরে মান্দারপুরে মহরমের তাজিয়া আয়োজন করা হয়। রথের দড়ি টেনে এসে মহরমের তাজিয়া কাঁধে নিয়ে বেরোতে হয়। এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘রথ এলাকার সম্প্রীতিকে ধরে রেখেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement