Coronavirus Lockdown

রাস্তায় বাস কম, হয়রানি চললই

ঘাটালে এ দিনও স্থানীয় ও দূরপাল্লার রুটে বাড়তি বাস নামেনি। লকডাউনের আগে স্থানীয় ও দুরপাল্লা মিলিয়ে মোট ২৫০টি বাস ঘাটাল শহর ছুঁয়ে যেত।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২০ ০৩:৩৪
Share:

সোমবার মেদিনীপুর শহরে হাতেগোনা কয়েকটি বেসরকারি বাস চলে। যাত্রী ছিল খুবই কম। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

আশ্বাস ছিল। কিন্তু দুর্ভোগের ছবি বদলাল না।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরে সোমবারও স্বাভাবিক হয়নি বাস পরিষেবা। বাস মালিক সংগঠনের দাবি, যাত্রী মিলছে না। তাই বেশি সংখ্যক বাস রাস্তায় নামেনি। জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি বলেন, ‘‘একেবারেই যাত্রী হচ্ছে না। সোমবার তাও কিছু সংখ্যক বাস রাস্তায় নেমেছে। জানি না সম- সংখ্যক বাস মঙ্গলবার রাস্তায় নামবে কি না! চার-পাঁচজনকে নিয়ে তো আর সব রুটে বাস চালানো সম্ভব নয়।’’ সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের উপর দিয়ে প্রায় ৮০০টি বেসরকারি বাস চলাচল করে। লকডাউন শিথিল হওয়ার পরে ১৫-১৬টি বাস নামছিল। সোমবার নামে প্রায় ৭০টি বাস। এরমধ্যে কিছু আন্তঃজেলা বাসও ছিল। মৃগাঙ্ক বলেন, ‘‘হাওড়া রুটে কিছু বাস চলেছে। শুনেছি যাত্রী মেলেনি। জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে। তাই ভয়ে অনেকে বেরোচ্ছেন না।’’

ঘাটালে এ দিনও স্থানীয় ও দূরপাল্লার রুটে বাড়তি বাস নামেনি। লকডাউনের আগে স্থানীয় ও দুরপাল্লা মিলিয়ে মোট ২৫০টি বাস ঘাটাল শহর ছুঁয়ে যেত। সেখানে এ দিন ঘাটাল থেকে হাওড়া-কলকাতা রুটের গোটা পঁচিশেক বাস চলাচল করেছে। আর ঘাটাল-পাঁশকুড়া, ঘাটাল-গোপীগঞ্জ, ঘাটাল-কুঠিঘাট রুটের কয়েকটি বাস একবার ‘ট্রিপ’ করেই বসে যায়। শুধু পাঁশকুড়া রুটের দু’টি বাস কয়েকবার চলাচল করেছে। নিয়ম মেনে সোমবার থেকে ঘাটালেও অনেক সরকারি ও বেসরকারি অফিসে হাজিরা বেশি ছিল। তাই বাসস্ট্যান্ডগুলিতে যাত্রীর সংখ্যাও ছিল বেশি। সেখানে বাসের দেখা না পেয়ে তারা সমস্যায় পড়েন। ঘাটাল শহরের এক যুবক তমালকান্তি মণ্ডলের অভিযোগ, “আমি চন্দ্রকোনা রোডে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করি। সময়ের অনেক আগে বেরিয়েছিলাম। তাতেও বাস পাইনি। শেষে বন্ধুর বাইকে করে কর্মস্থলে যাই।” দাসপুরের বাসিন্দা পাপিয়া সেনাপতির ক্ষোভ, “আমি মেদিনীপুর যাওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ দাসপুর স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েছিলাম। একটি বাসও চোখে পড়ল না।”

Advertisement

ঘাটালে বেসরকারি বাস নামছে না কেন? বাস মালিকদের সাফাই, ঘাটাল মহকুমায় গত কয়েকদিনে অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাই যাত্রী হচ্ছে না। ঘাটাল মহকুমা বাস মালিকদের পক্ষে প্রভাত পান ও মোহন বাগ বলেন, “যাত্রী নেই। ঘরের টাকায় তেল কিনে কতদিন চালাব!”

বেলদা, নারায়ণগড়ে কয়েকটি বেসরকারি বাস চললেও যাত্রীদের তেমন দেখা যায়নি। কেশিয়াড়িতে বাস মালিকেরা বাসের সময়সূচি জানিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে সেখানেও বাসের দেখা সেভাবে মেলেনি। কেশিয়াড়ি, দাঁতন-সহ বিভিন্ন রুটে হাতে গোনা ১০টি বেসরকারি বাস চললেও যাত্রী হয়নি। জেলা বাস মালিক সংগঠনের এক নেতা বলেন, ‘‘খড়্গপুরের ক্ষেত্রে বাসের যাত্রী সংখ্যা ট্রেনের ওপরে নির্ভর করে। ট্রেন না চলায় যাত্রী হচ্ছে না। যেভাবে লোকসান হচ্ছে তাতে এভাবে কতদিন বাস চালানো যাবে জানি না।’’ বাস সেভাবে দেখা যায়নি গড়বেতার তিনটি ব্লকেও।

সোমবার দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ঝাড়গ্রামের ডিপো থেকে ১৫টি বাস চলেছে। যাত্রী সংখ্যা অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা বেশি ছিল। রবিবার জেলার মধ্যে দু’টি রুটে বেসরকারি বাস চলেছিল। সোমবার সেই সংখ্যা বেড়ে হয় পাঁচটি। এ দিন রগড়া-ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর-ঝাড়গ্রাম, বেলিয়াবেড়া-ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম এবং ওড়ো-ঝাড়গ্রাম এই পাঁচটি রুটে বেসরকারি বাস চলেছে। ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট বাস ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ পাল বলেন, ‘‘সোমবার বেশি সংখ্যক বাস নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু রবিবার জেলায় নতুন করে ৫ জনের করোনা আক্রান্তের খবর আসায় অধিকাংশ বাসকর্মী কাজে যোগ দিতে রাজি হননি। বাসে যাত্রীও হয়নি।’’ এ দিনই পরিবহণ দফতর থেকে বাস মালিক সংগঠনকে মঙ্গলবারের মধ্যে সমস্ত বেসরকারি বাস পথে নামাতে বলা হয়। দিলীপ বলছেন, ‘‘লকডাউনে বাস মালিকেরা বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এখন বাস চালিয়েও যাত্রী হচ্ছে না। এ দিকে করোনা আক্রান্তের খবর মিলছে। এই পরিস্থিতিতে বাস মালিক ও কর্মীরা বেঁকে বসলে আমরা কী করব!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement