প্রতীকী ছবি।
পশ্চিম মেদিনীপুরে করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখীই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় আরও বেশি করে করোনা পরীক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে। দৈনিক পরীক্ষার লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হয়েছে। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, জেলায় এখন দৈনিক করোনা পরীক্ষার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৪,২০০। তবে তা অবশ্য অধরাই থাকছে। এখন দিনে গড়ে ২,৫০০ থেকে ২,৭০০ জনের পরীক্ষা হচ্ছে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, উপসর্গ রয়েছে বা করোনা সংক্রমিতের সংস্পর্শে এসেছেন, এমন মানুষজনের পরীক্ষা করানো জরুরি। কিন্তু পরীক্ষা করাতে চাইছেন না অনেকেই। ফলে, সংক্রমণ আরও ছড়ানোরও আশঙ্কা থাকছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের দাবি, জেলার করোনা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। করোনা পরীক্ষার লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সবরকম চেষ্টা চলছে। জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্কতামূলক সব রকম ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি মানছেন, ‘‘দৈনিক করোনা পরীক্ষার লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। করোনা পরীক্ষার উপরে আরও জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। সব দেখেই পরীক্ষা বাড়ানো হচ্ছে।’’
জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, এখন দৈনিক করোনা পরীক্ষার লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৩,০০০ অ্যান্টিজেন পরীক্ষা আর ১,২০০ আরটিপিসিআর পরীক্ষা করার কথা। সেখানে এখন দিনে গড়ে আরটিপিসিআর পরীক্ষা হচ্ছে ৪০০-৫০০। অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হচ্ছে দিনে গড়ে ২,২০০ থেকে ২,৩০০। জেলার একাংশ স্বাস্থ্যকর্মী মানছেন, ‘‘অনেকের মধ্যে করোনা পরীক্ষা করানোর বিষয়ে চরম অনীহা রয়েছে এখনও। রিপোর্ট পজ়িটিভ এলে সামাজিক হেনস্থার শিকার হতে হবে, এই ভেবেই অনেকে পরীক্ষা করাতে চাইছেন না বলে মনে হচ্ছে।’’ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমাদের তরফে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সব রকম চেষ্টা থাকছে। আমরা বলছি, উপসর্গ দেখা দিলেই তাঁরা করোনা পরীক্ষা করিয়ে নিন।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বারবার চরিত্র বদল করছে করোনাভাইরাস। ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। প্রশাসনিক সূত্রের অবশ্য দাবি, পশ্চিম মেদিনীপুরে এখনও কোনও রোগীর শরীরে ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট পাওয়া যায়নি। মেদিনীপুর মেডিক্যালের প্রফেসর তথা আইএমএ- র মেদিনীপুর শাখার সম্পাদক কৃপাসিন্ধু গাঁতাইতের মতে, ‘‘সংক্রমিতদের সংস্পর্শে যাঁরা আসছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সংক্রমিতদের চিহ্নিত করতে না পারলে সংক্রমণ ঠেকানো মুশকিল। তাই বেশি হারে পরীক্ষা করানো জরুরি এখন।’’
একাধিক মহল মনে করাচ্ছে, দৈনিক করোনা পরীক্ষা বাড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল রাজ্যকে পাঠানো কেন্দ্রের চিঠিতেও। মাস কয়েক আগে কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছিল, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো কয়েকটি জেলায় কম পরীক্ষা হচ্ছে। পরীক্ষা বাড়াতে হবে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, ‘‘জেলায় করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা আগের থেকে অনেকটাই কমে গিয়েছিল এক সময়ে। সেই কারণে পরীক্ষার সংখ্যাও সেই সময়ে তুলনামূলকভাবে কমেছিল। গত কয়েক দিন ধরে দৈনিক সংক্রমণ বাড়ছে। সব দেখে পরীক্ষাও বাড়ানো হয়েছে।’’ তিনি শোনাচ্ছেন, ‘‘এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো প্রস্তুত রয়েছে জেলায়। প্রয়োজন হলে পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়াতে সমস্যা হবে না।’’