ডাক্তার পাই কোথায়  

হাসপাতাল সূত্রে খবর, যে ৩ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তাদের একজনের বয়স ২৯ দিন, একজনের ৫ দিন, অন্য একজনের ১ মাস ২৭ দিন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯ ০০:৫২
Share:

কর্মবিরতির জন্য মিলল না ডেথ সার্টিফিকেট। তাই ওয়ার্ডে রোগীদের পাশেই পড়ে থাকল মৃতদেহ। বুধবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

পূর্ব ঘোষণা মতোই বুধবার কাজ বন্ধ রেখে অবস্থান-বিক্ষোভে সামিল হলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তার জেরে এ দিন মেদিনীপুর মেডিক্যালের চিকিৎসা পরিষেবা কার্যত শিকেয় ওঠে। কাজ বন্ধ রেখে জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। বন্ধ ছিল বহির্বিভাগের পরিষেবা।

Advertisement

এ দিন জুনিয়র ডাক্তার ও রোগীর পরিজনদের মধ্যে হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম হয়। চিকিৎসা পরিষেবা চালুর দাবিতে সকাল থেকে দফায় দফায় হাসপাতালের সামনে পথ অবরোধ করেন রোগীর পরিজনেরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য দিনে গড়ে ৩-৪ জন রোগীর মৃত্যু হলেও ঘটনাচক্রে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩ জন শিশু-সহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, ‘‘গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে কয়েকজন মারা গিয়েছেন। কোনও লিখিত অভিযোগ পেলে নিশ্চয় খতিয়ে দেখা হবে। যে পদক্ষেপ করার করা হবে।’’ হাসপাতাল সূত্রের দাবি, রোগী মৃত্যু নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, যে ৩ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তাদের একজনের বয়স ২৯ দিন, একজনের ৫ দিন, অন্য একজনের ১ মাস ২৭ দিন। মঙ্গলবার রাতে অশোক হাজরা নামে বছর আঠাশের এক যুবক মারা যায়। ক্ষীরপাইয়ের লড়পুরের বাসিন্দা ওই যুবক গত চারদিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর দাদা নবকুমারের দাবি, ‘‘মঙ্গলবার থেকেই ভাইয়ের চিকিৎসা হয়নি। ডায়ালিসিস হওয়ার কথা ছিল। হয়নি। স্যালাইন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।’’ নবকুমারের ক্ষোভ, ‘‘মৃতদেহ নিয়ে যেতেও পারছি না। এ দিক ও দিক ঘোরানো হচ্ছে।’’ বুধবার ভোরে মারা যান বছর ষাটের ব্রজেন দণ্ডপাট। মঙ্গলবার থেকে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। ব্রজেনের ছেলে মানিকের দাবি, ‘‘বাবা শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিল। ডাক্তার দেখলই না।’’ মঙ্গলবার রাতে মারা গিয়েছেন শেফালি পিড়ি নামে এক মহিলা। তাঁর পরিজন স্বপন পিড়ির দাবি, ‘‘রোগীর খিঁচুনি উঠছে। ডাক্তার বলছে, রোগী দেখব না। মারা যাওয়ার পরে বলছে, ডেথ সার্টিফিকেটও দিতে পারব না। শুনেছি, সব ওয়ার্ডেই রোগী মারা গিয়েছে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘রাতে একদল ছেলে গিয়ে ওয়ার্ডে হামলা করে। ওরা না কি ডাক্তার। ওরা না কি দেশের ভবিষ্যৎ!’’

Advertisement

পরিস্থিতি সামাল দিতে অধ্যক্ষ আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তখন অধ্যক্ষকে শুনতে হয়, ‘‘পুরো হাসপাতাল কি ইন্টার্নরাই চালায়? কেন বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে?’’

দুপুরে জুনিয়র ডাক্তাররা অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেন, রোগীর পরিজনদের জমায়েত থেকে একজন অশালীন আচরণ করেছে। বিক্ষোভরত জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে মহিলারাও ছিলেন। ওই যুবকের গ্রেফতারির দাবিতে সরব হন তাঁরা। অধ্যক্ষ বিষয়টি পুলিশকে জানানোর আশ্বাস দেন। পুলিশ জানিয়েছে, যুবকের খোঁজ পেলে দেখা হবে সে বিকৃতমনষ্ক কি না, না কি ইচ্ছে করেই এমন আচরণ করেছে।

এ দিন মেডিক্যালে যান জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৌমেন খান। তাঁর অভিযোগ, কর্মবিরতির কথা আগে থেকে জানানো হলেও পরিষেবা চালুর ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা হয়নি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘দু’পক্ষকেই সংযত হতে হবে। জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশকে যেমন সংযত হতে হবে, তেমন রোগীর পরিজনেদের একাংশকেও সংযত হতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement