—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ট্রেন যাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্য পেতে বাতানুকূল কামরায় বাড়তি ভাড়া দিতে হয় যাত্রীদের। অথচ শীতে দূরপাল্লার ট্রেনে সেই বাতানুকূল কামরায় যাতায়াত হয়ে উঠেছে কার্যত দুর্বিসহ। বাতানুকূল স্লিপার কামরায় উঠে শীতে কাঁপছেন যাত্রীরা। সেখানে কম্বল মিলছে না। বদলে মিলছে চাদর।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর রেল ডিভিশনের ওড়িশাগামী ট্রেনে এমনই পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন যাত্রীরা। গত দু’মাস ধরে এই অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি অনেক যাত্রী এক্স-হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) জানালেও সুরাহা মিলছে না বলে অভিযোগ। শুধু ওড়িশা নয়, দক্ষিণ ভারতগামী বহু দূরপাল্লার ট্রেনেও একই পরিস্থিতি বলে জানা গিয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, বাতানুকূল কামরায় কম্বল চাইলে সেখানকার সহায়করা জানিয়ে দিচ্ছেন, কম্বল নোংরা থাকায় দেওয়া যাবে না। বহু অনুযোগের শেষে কম্বলের বদলে মিলছে চাদর। কিন্তু সেটাও নোংরা।
ট্রেন দেরিতে চলা, নিয়মিত বাতিল, চলাচলের সময় ও গতিপথ পরিবর্তন নিয়ে ক্ষোভের মাঝে বাতানুকূল কামরার কম্বল না মেলার অভিযোগ অন্য মাত্রা জুড়েছে। এমন ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করলে ঢোঁক গিলছেন রেল কর্তৃপক্ষ।রেল আধিকারিকদের দাবি অনুযায়ী, করোনার সংক্রমণের পরে বিছানা দেওয়া বন্ধ থাকলেও পরিস্থিতির উন্নতি হতে রেলের পক্ষ থেকে কম্বল-বিছানা দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য চৌধুরী বলছেন, “এমন অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। বাতানুকূল স্লিপার কামরায় কম্বল তো দেওয়া হচ্ছে। যদি কেউ বলেন কম্বল দেওয়া হচ্ছে না তবে ভুল বলছেন। কম্বল, বিছানা সব যথাযত দেওয়া হচ্ছে।” এই নিয়ে যোগাযোগ করা হলে খড়্গপুর রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার ওমপ্রকাশ চরণ জানান, তিনি বাইরে আছেন।
রেল কর্তৃপক্ষ এমন দাবি করলেও যাত্রীদের অভিজ্ঞতা বলছে অন্য কথা। বিশেষ করে ওড়িশাগামী কোনও ট্রেনেই কম্বল দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। নিয়ম অনুযায়ী শীতকালে অবশ্যই কম্বল পাওয়ার কথা যাত্রীদের। রেল আধিকারিকেরাও বলছেন, কম্বল-বিছানা দেওয়া হচ্ছে। তারপরেও বাতানুকূল কামরায় থাকা সহায়করা তা দিতে চাইছেন না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন যাত্রীরা। মেদিনীপুর শহরের মিত্র কম্পাউন্ডের বাসিন্দা রিতা বেরা গত নভেম্বরে সপরিবারে পুরী ভ্রমণে গিয়েছিলেন। রিতা বলছিলেন, “আমরা গত ৯ নভেম্বর হাওড়া-পুরী ‘গরিব রথে’ থ্রি-টিয়ার এসি কামরায় পুরী গিয়েছিলাম। রাতে ঠান্ডা লাগছিল। কম্বল চাইলেও সহায়ক তা দেননি। বলেছেন কম্বল নোংরা। অনেক বলার পরে একটা চাদর দেন। চাদর বা বালিশের কভার অন্যের ব্যবহার করা বলেই মনে হয়েছে। প্যাকেটের মুখও খোলা ছিল। পরিষেবা না পেলে কেন বাড়তি ভাড়া দিয়ে বাতানুকূল কামরায় যাব!”
হাওড়া থেকে কর্মসূত্রে নিয়মিত ভুবনেশ্বরে যাতায়াত করা উত্তর ২৪ পরগণার নৈহাটির বিনয় শুক্লরও একই অভিযোগ। তিনি বলেন, “মাস দু'য়েক ধরে বাতানুকূল কোনও কামরাতেই কম্বল দেওয়া হচ্ছে না। চাদরও যথেষ্ট নোংরা। গত ১০ ডিসেম্বরও ভুবনেশ্বরে আসার সময় কম্বল চেয়েও না পাওয়ায় এক্স হ্যাণ্ডেলে অভিযোগ করি। কিন্তু সুরাহা হয়নি। রেল গৌরব হারাচ্ছে।”