টিকিটের লেখা বুঝতে কালঘাম ছুটছে যাত্রীর। — নিজস্ব চিত্র।
ট্রেনের টিকিটের লেখা অস্পষ্ট। কোনও টিকিটে আবছা লেখা বোঝা দায়, আবার কোনও টিকিটে লেখা গাঢ় রঙের হওয়ায় জড়িয়ে গিয়েছে। খড়্গপুর স্টেশনে টিকিট কেটে সমস্যায় পড়ছেন যাত্রীরা।
বেসরকারি সংস্থার সার্ভিস ইঞ্জিনিয়র ওড়িশার ভুবনেশ্বরের বাসিন্দা সুসাররঞ্জন জেনা নিয়মিত খড়্গপুরে আসেন। বুধবারও খড়্গপুর স্টেশনে হাওড়ার টিকিট কাটেন তিনি। যদিও টিকিটের ছাপা এতটাই অস্পষ্ট, যে কী লেখা রয়েছে তা অনেক চেষ্টা করেও সুসাররঞ্জনবাবু উদ্ধার করতে পারেননি। বিরক্ত সুসাররঞ্জন বলছিলেন, “মাস কয়েক ধরে দেখছি খড়্গপুর স্টেশনের কাউন্টার থেকে যে টিকিট দেওয়া হচ্ছে তার লেখা আবছা। কোনও টিকিটে ছাপা লেখা গাঢ় রঙের হলেও জড়ানো। পড়া যায় না। এ জন্য হাওড়া স্টেশনে গিয়ে বিপদে পড়তে হয়।”
শুধু সুসাররঞ্জনবাবু নন, খড়্গপুরের বোগদা সংলগ্ন পাঁচটি অসংরক্ষিত টিকিট কাউন্টার থেকে দেওয়া টিকিট কিনে সমস্যায় পড়ছেন যাত্রীরা। কখনও টিকিটের লেখা অস্পষ্ট থাকায় বোঝা যাচ্ছে না, আদৌ কাউন্টার থেকে ঠিকঠাক স্টেশনের টিকিট পাওয়া গেল কি না। আবার টিকিটের ছাপা গাঢ় হলেও কোনওভাবেই উদ্ধার করা যাচ্ছে না কী লেখা রয়েছে।
‘এ-ওয়ান’ জংশন স্টেশন খড়্গপুর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২১ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। দিনে গড়ে ১৬ লক্ষ টাকার টিকিট বিক্রি হয়। এমন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের কাউন্টারের প্রিন্টার কী ভাবে এতদিন খারাপ থাকে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন যাত্রীদের একাংশ। শুধু লোকাল বা প্যাসেঞ্জার ট্রেন নয়, দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট নিয়েও সমস্যায় পড়ছেন যাত্রীরা।
খড়্গপুরের বাসিন্দা হরিশ কুমার বলেন, “খড়্গপুর স্টেশনের কাউন্টার থেকে কাটা টিকিটে কী লেখা রয়েছে তা বুঝতে পারছি না। এ জন্য অনেক যাত্রীকে ট্রেনে উঠে বিপদেও পড়তে হচ্ছে। টিকিট পরীক্ষকদেরও বিভ্রান্তি বাড়বে। বিষয়টি রেলের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত” ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য প্রদীপ পট্টনায়েক বলেন, “তথ্য জানার অধিকার আইনে তথ্য জানতে টাকা জমা দিয়ে খড়্গপুর স্টেশনের কাউন্টার থেকে টিকিট কেটেছিলাম। টিকিটের অস্পষ্ট লেখা পড়তে না পেরে রেল আধিকারিকদের জানাই। পরে শুনেছিলাম মঙ্গলবার স্টেশনের প্রিন্টার মেরামতি হয়েছে। তার পরেও সমস্যা থেকেই গিয়েছে।’’
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে স্টেশনের পাঁচটি কাউন্টারের প্রিন্টার মেরামতি করা হয়েছে। তারপরে বুধবার কাউন্টার থেকে যে টিকিট মিলেছে তাতে লেখার রং অত্যাধিক গাঢ় হওয়ায় বোঝা দায়। স্টেশনের এক বুকিং ক্লার্কের কথায়, “টিকিট কাটার যে প্রিন্টার ব্যবহার করা হয় তা পুরনো। তাই প্রিন্টার মেরামতি করেও লাভ হচ্ছে না। প্রিন্টারগুলি বদলানো প্রয়োজন।” এ বিষয়ে খড়্গপুরের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার কুলদীপ তিওয়ারি বলেন, “মঙ্গলবারই সমস্যার কথা জানতে পেরে টিকিট কাউন্টারের সমস্ত প্রিন্টার মেরামতি করা হয়েছে। এরপরেও সমস্যা হয়ে থাকলে খতিয়ে দেখব। মার্চ মাসের পর প্রিন্টার বদলও করা হবে।”