বুধবার সকালে তৃণমূল কার্যালয়ে পদ্ম পতাকা, বেলা বাড়তে কার্যালয় ফেরত পেল তৃণমূল। নিজস্ব চিত্র
রাত থেকে ভোর। দু’দফায় রংবদল।
ছিল সবুজ। হয়েছিল গেরুয়া। ফের হল সবুজ! রাতারাতি ‘দখল’ হওয়া দলীয় কার্যালয় ফিরে পেল তৃণমূল। সৌজন্যে বিজেপি। ঘটনা মেদিনীপুর সদর ব্লকের গুড়গুড়িপালের শালিকার। লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর তৃণমূল- বিজেপির মধ্যে আকচাআকচি শুরু হয়েছে। বিজেপির বিরুদ্ধে দখলদারির অভিযোগ করছে তৃণমূল। এরই মাঝে এ যেন এক উলটপুরাণ।
বিজেপির মেদিনীপুর সদর ব্লকের গ্রামীণ পশ্চিম মণ্ডলের সভাপতি সুজয় দাস মানছেন, ‘‘আমরা ওই কার্যালয় তৃণমূলকে ফিরিয়ে দিয়েছি। ওটা তৃণমূলেরই থাকবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘প্রয়োজন হলে দলের কর্মীরা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে ওখানে দলীয় কার্যালয় করে নেবেন।’’ বেহাত হওয়া দলীয় কার্যালয় ফিরে পাওয়ার কথা মানছে তৃণমূলও। তারা এ-ও মানছে যে, এ ক্ষেত্রে বিজেপি নেতৃত্বই উদ্যোগী হয়েছেন। ওই এলাকাটি মেদিনীপুর সদর ব্লকের মণিদহ অঞ্চলের অন্তর্গত। তৃণমূলের মণিদহ অঞ্চল সভাপতি তথা স্থানীয় উপপ্রধান অঞ্জন বেরা বলেন, ‘‘বিজেপির নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ। তারা আমাদের কার্যালয় ফিরিয়ে দিয়েছেন। আশা করব, এলাকায় আগামী দিনেও এই সৌজন্যের রাজনীতি বজায় থাকবে।’’
ভোরের আলোর সঙ্গে সৌজন্য ফিরলেও শুরুটা কিন্তু এরকম ছিল না। অন্য কারও বিরুদ্ধে নয়, বিজেপির একদল কর্মীর বিরুদ্ধেই তৃণমূলের এই কার্যালয় ‘দখল’ করার অভিযোগ উঠেছিল।
গুড়গুড়িপালের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে মেদিনীপুর- ঝাড়গ্রাম (ভায়া ধেড়ুয়া) রাজ্য সড়ক। সড়কের এক পাশেই রয়েছে তৃণমূলের ওই কার্যালয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাতে হঠাৎই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে দিতে একদল বিজেপি কর্মী এখানে জড়ো হন। কার্যালয়ে থাকা তৃণমূলের পতাকা নামিয়ে সেখানে বিজেপির পতাকা লাগিয়ে দেন। বুধবার সকালে স্থানীয়েরা দেখেন, তৃণমূলের কার্যালয় ‘বেহাত’ হয়ে গিয়েছে। সেখানে বিজেপির পতাকা পতপত করে উড়ছে। খবর পৌঁছয় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে। খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছন শাসক দলের নেতৃত্ব। পরে তাঁরা বিজেপির নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মণিদহে দু’পক্ষের কর্মীরা এক বৈঠকেও বসেন। ঠিক হয়, এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে দু’দলই উদ্যোগী হবে। কেউ কারও কার্যালয় দখল করবে না। এরপরই তৃণমূলকে ওই কার্যালয়ের দখল ফিরিয়ে দেয় বিজেপি।
কিন্তু রাতারাতি লাগানো বিজেপির পতাকা নামাবে কে?
বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব জানান, দলের পতাকা তাঁরা নামাতে পারবেন না। এটা অনুচিত হবে। তৃণমূলের কর্মীদেরই পতাকা নামাতে হবে। শেষমেশ তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি অঞ্জন সহ কয়েকজন কর্মী বিজেপির পতাকাগুলো নামিয়ে ফেলেন। বিজেপি কর্মীদের সামনেই পতাকা নামানো হয়। পরে ওই পতাকাগুলো বিজেপির কর্মীদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
রাতারাতি তৃণমূলের এই কার্যালয় ‘দখল’ করা হয়েছিল কেন? বিজেপির মণ্ডল সভাপতি সুজয় বলেন, ‘‘আমরা দখল করিনি। দলের কয়েকজন সমর্থক জয়ের আনন্দে বিহ্বল হয়ে কিছু করে থাকতে পারেন।’’ মেদিনীপুর সদর ব্লকের এই এলাকায় শাসক দলের নিরঙ্কুশ আধিপত্য থাকলেও লোকসভা ভোটে তৃণমূলকে পিছনে ফেলেছে বিজেপি। এখানে বিজেপি পেয়েছে ৪৩৬ ভোট, তৃণমূল পেয়েছে ৩৬০ ভোট, আর বামেরা পেয়েছে ১২ ভোট। সুজয় বলেন, ‘‘আমরা চাই, এলাকায় গণতন্ত্র থাকুক। কেউ গায়ের জোরে কারও দলীয় কার্যালয় কেড়ে নেবে তা হবে না।’’ তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি অঞ্জন বলেন, ‘‘আমরা এলাকায় শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেছি। বিজেপি নেতৃত্বও এতে একমত হয়েছেন।’’ বিজেপির মণ্ডল সভাপতি সুজয় বলেন, ‘‘আমরা দখলের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। করি না- বলেই ওই কার্যালয় তৃণমূলকে ফিরিয়ে দিয়েছি।’’
মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত এই কার্যালয়ে তৃণমূলের পতাকাই উড়তে দেখেছিলেন স্থানীয়রা। বুধবার সকালে তাঁরা দেখেন, সেখানে বিজেপির পতাকা উড়ছে। আবার বেলা একটু গড়াতে তাঁরা দেখেন, ফের কার্যালয়ে তৃণমূলের পতাকা উড়ছে। যেন গোলকধাঁধা! সব দেখে স্থানীয় এক গ্রামবাসীর মন্তব্য, ‘‘আজ সবার রঙে রং মিশাতে হবে।’’