সরকার স্কুল খোলার কোনও ঘোষণা না করায় হতাশ অভিভাবকদের একাংশ।
প্রবল গরম এবং তাপপ্রবাহের কারণে গত এপ্রিলে রাজ্য সরকার সরকারি স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি এগিয়ে দেয়। কিন্তু স্কুল কবে খুলবে, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি শিক্ষা দফতর। গরমের তেজ থাকলেও বর্তমানে তাপপ্রবাহ আর নেই। শিক্ষকদের দাবি, স্কুল চালানোর মতো পরিবেশ রয়েছে। এর পরেও সরকার স্কুল খোলার কোনও ঘোষণা না করায় হতাশ অভিভাবকদের একাংশ।
করোনা কালে প্রায় দু'বছর টানা সমস্ত সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এত দিন স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষায় আগুয়ান জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে স্কুলছুটের সংখ্যা বেড়েছিল। অতিরিক্ত গরমের কারণে গত বছরও সরকারি স্কুলগুলিতে টানা প্রায় দু'মাস ছুটি ঘোষণা করেছিল রাজ্য। চলতি শিক্ষাবর্ষে এপ্রিল মাসে তাপপ্রবাহের কারণে এক সপ্তাহ স্কুল বন্ধ ছিল। আর আগামী ২৪ মে থেকে সরকারি স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি পড়ার কথা থাকলেও ওই ছুটি এগিয়ে গত ২ মে থেকে শুরু করে দেওায়া হয়। আগের সূচি অনুযায়ী হাইস্কুলগুলিতে গরমের ছুটি ছিল ১০ দিনের। সেই মতো ১০ দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু স্কুল খোলা নিয়ে কোনও নির্দেশ জারি করেনি শিক্ষা দফতর। ফলে স্কুল খোলা নিয়ে অভিভাবকদের কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না শিক্ষকেরাও।
শিক্ষক মহলের মতে, এরকম চলতে থাকলে সচেতন অভিভাবকরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের সরকারি স্কুল থেকে নিয়ে গিয়ে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করাবেন। স্কুলছুটের সংখ্যাও ফের বাড়তে পারে। আর ছুটি থাকায় মিড ডে মিল পাচ্ছে না পড়ুয়ারা। এতে শিশুদের মধ্যে পুষ্টির অভাব দেখা দেবে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে নাবালিকা বিবাহ বাড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। কোলাঘাটের কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন, "গরমের ছুটির মেয়াদ শেষ। কিন্তু স্কুল খোলা নিয়ে কোনও নির্দেশ নেই। এরকম চলতে থাকলে নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে সিলেবাস শেষ করা যাবে না। সচেতন অভিভাবকরা চাইবেন তাঁদের পড়ুয়ারা পড়াশোনার মধ্যে থাকুক। তাই তাঁরা সরকারি স্কুল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।’’
অবিলম্বে স্কুল খোলার পক্ষে অভিভাবকেরাও। ঝুমা সামন্ত নামে পাঁশকুড়ার এক অভিভাবক বলেন, "গরম থাকলেও এখন দাবদাহ নেই। স্কুল চালানোর মতো পরিবেশ রয়েছে। তাহলে কেন সরকার স্কুল খুলছে না!’’ এ ব্যাপারে জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা দফতর। এতে আমাদের কোনও হাত নেই।’’
এক দিন আগেই কলকাতা হাই কোর্ট ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করেছে। সরকারি স্কুলে এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে বেসরকারি স্কুলের রমরমা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বিরোধী শিবিরের দাবি, রাজ্য সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে বেসরকারিকরণ করতে চাইছে। বিজেপির টিচার্স সেলের জেলা আহ্বায়ক পার্থ চক্রবর্তী বলেন, "বর্তমান রাজ্য সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ছেলেখেলা করছে। স্কুলগুলিতে অহেতুক ছুটি দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি করে শিক্ষক নিয়োগ করেছে। তার খেসারত দিতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। আসলে এই ভাবে রাজ্য সরকার অভিভাবকদের মধ্যে সরকারি স্কুলের প্রতি একটা অনীহা তৈরি করতে চাইছে। কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য।’’