গরমে শরীর জুড়োতে ভরসা সেই পান্তোই

রাজনীতির রং যাই হোক, এই গরমে বিভেদ মুছে দিয়েছে ‘পান্তাভাত’। তৃণমূলের বিদায়ী মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা থেকে সিপিএমের বিদায়ী বিধায়ক দিবাকর হাঁসদা। ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর নেত্রী চুনিবালা হাঁসদা থেকে বিজেপি-র নবাগত শিক্ষক-প্রার্থী বকুল মুর্মু।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৬
Share:

পান্তাভাতে। বিরবাহা হাঁসদা (বাঁদিকে) ও চুনিবালা হাঁসদা (ডানদিকে)। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

রাজনীতির রং যাই হোক, এই গরমে বিভেদ মুছে দিয়েছে ‘পান্তাভাত’। তৃণমূলের বিদায়ী মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা থেকে সিপিএমের বিদায়ী বিধায়ক দিবাকর হাঁসদা। ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর নেত্রী চুনিবালা হাঁসদা থেকে বিজেপি-র নবাগত শিক্ষক-প্রার্থী বকুল মুর্মু। কয়েক দিনের টানা তাপপ্রবাহের জেরে সকাল, দুপুর ও রাতের পাতে স্বস্তি এনে দিচ্ছে পান্তাভাত। আদর করে জঙ্গলমহলে কেউ বলেন পান্তো, আবার কেউ বলেন ভিজে ভাত, ঠান্ডাভাত কিংবা আমানি।

Advertisement

জঙ্গলমহলের বিশিষ্ট শিক্ষাব্রতী সুধাংশুশেখর মাহাতো জানালেন, জনপ্রিয় এই জলঢালা ভাত খাওয়ার প্রচলনটি বহু প্রাচীন। চণ্ডীমঙ্গলে কালকেতু সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে, ‘মোচড়াইয়া গোঁফ দুইটা বান্ধিলেক ঘাড়ে, এক গ্রাসে সাত হাঁড়ি আমানি উজাড়ে’। অর্থাৎ, কালকেতু তাঁর ইয়া লম্বা গোঁফ দু’টি পিছনে বেঁধে তারপর খেতে বসে এক গ্রাসে সাত হাঁড়ি আমানি সাবাড় করে ফেলতেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে, এখন তাপমাত্রার পারদ ৪০ ডিগ্রির উর্ধ্বমুখী। জঙ্গলমহলে ভোট পর্ব মিটে যাওয়ার পরে অনেকটাই হালকা মেজাজে রয়েছেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। সুকুমারবাবু, দিবাকরবাবু, চুনিবালাদেবীর মতো পোড় খাওয়া নেতা-নেত্রীরা অবশ্য মাঝে মধ্যে দলের কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছেন। ভোটের ফল কী হতে পারে, সে বিষয়ে আগাম ধারণা পাওয়ার জন্য এলাকায় এলাকায় ঘুরছেনও। দল আর রংয়ে প্রভেদ থাকলেও চড়চড়ে তাপের ক্লান্তি জুড়োতে পান্তাভাতের যে জুড়ি নেই, তা মানছেন সকলেই।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুকুমার হাঁসদার মেনুতে তিন বেলাই এখন কাঁচা লঙ্কা ও ধানি পেঁয়াজ সহযোগে পান্তাভাত। সঙ্গে কখনও ছোটমাছের চচ্চড়ি, পোস্তবড়া, অথবা কুচো মাছের টক। তাঁর কথায়, “জঙ্গলমহলের খাদ্য সংস্কৃতিতে পান্তাভাত এক নম্বরে। গরমে শরীর জুড়োতে পান্তার জুড়ি নেই।” সুকুমারবাবুর প্রতিপক্ষ ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের বাম সমর্থিত ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর প্রার্থী চুনিবালা হাঁসদার কথায়, “রাতে ভাত রেঁধে জল ঢেলে রাখছি। পরদিন সকালে পান্তা দিয়ে জলখাবার সারছি। সঙ্গে কুচো মাছের টক, বেগুন পোড়া, সজনে শাক ভাজা দিয়ে জম্পেস পান্তা-লাঞ্চও হচ্ছে। সকালেও ভাত রান্না করে জল ঢেলে রাখছি। রাতে কাঁচা পোস্ত বাটা দিয়ে সেই জলঢালা ভাত খাচ্ছি।”

ছোটবেলা থেকেই পান্তাভাতে মজে আছেন চুনিবালাদেবীর বড় মেয়ে বিরবাহা হাঁসদাও। সাঁওতালি সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিরবাহা এবার বিনপুরে মায়ের দলের প্রার্থী হয়েছিলেন। মায়ের পাশে বসে এক মনে পান্তা খাওয়ার ফাঁকে বিরবাহা জানালেন, ঝাড়গ্রামে একটি সাঁওতালি ছবির আউটডোর শু্যটিং চলছে। পান্তা খেয়েই তিনি কাজ করতে যাচ্ছেন। বিনপুরের সিপিএম প্রার্থী তথা বিদায়ী বিধায়ক দিবাকর হাঁসদা বলেন, “ছোটবেলা থেকেই পান্তাভাত খেয়ে বড় হয়েছি। সাধারণত, কাঁচা পেঁয়াজ আর কাঁচা লঙ্কা দিয়েই পান্তা খাই। জনসংযোগ অটূট রাখতে নিয়মিত গ্রামাঞ্চলে যাচ্ছেন দিবাকরবাবু। কর্মীদের বাড়িতেও পান্তাভাত খাওয়ার অনুরোধ ফেলতে পারছেন না।

নয়াগ্রামের বিজেপি প্রার্থী বকুল মুর্মু জানালেন, “গরমের দিনে পান্তাভাত অতি উপাদেয়। শাকভাজা কিংবা আলু-বেগুনের ঘ্যঁাট দিয়ে এক থালা পান্তা এক কথায় অমৃত!” নয়াগ্রামের বিদায়ী বিধায়ক তৃণমূল প্রার্থী দুলাল মুর্মু বলেন, “পান্তা খেলে ঘুম ঘুম পায়। তবে গাঁ-গঞ্জের খেটে খাওয়া মানুষজন পান্তা খেয়ে কঠোর পরিশ্রমের কাজ করে থাকেন। গরমে পান্তাই আমাদের অক্সিজেন!”

ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক প্রসূন ঘোষ বলেন, “পান্তাভাত সহজপাচ্য। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের পক্ষে পান্তাভাত অত্যন্ত উপকারী। পান্তাভাতে এমন কিছু ব্যাকটিরিয়ার জন্ম হয় যা মানবদেহের পক্ষে উপকারী। পান্তা ভাত ভিটাবিন বি-৬ ও বি-১২-র উৎস। এই গরমে আমিও পান্তা খাচ্ছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement