midnapore

একশো কোটির বেশি পড়ে গ্রাম পঞ্চায়েতে

বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজের গতি খুবই শ্লথ। যা নিয়ে বিরক্ত জেলা প্রশাসন। ওই পঞ্চায়েতগুলিকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ০৯:১২
Share:

গ্রাম উন্নয়নে বরাদ্দ টাকা এখনও পড়ে। প্রতীকী চিত্র।

১০-২০ কোটি নয়, পড়ে রয়েছে ১০০ কোটি টাকা!

Advertisement

অর্থ কমিশনের যে টাকা জেলার জন্য বরাদ্দ হয়, তার বড় অংশই ব্যয় করার দায়িত্বে থাকে গ্রাম পঞ্চায়েত। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বিপুল বরাদ্দ পেয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি। তবে অনেকটাই এখনও খরচ হয়নি। জানা যাচ্ছে, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে সব মিলিয়ে বরাদ্দের প্রায় ৭০ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে। বাকি ৩০ শতাংশ টাকা পড়েই রয়েছে। সেই অঙ্কটা একশো কোটিরও বেশি। জেলা প্রশাসনের আশ্বাস, পড়ে থাকা টাকা চলতি মার্চের মধ্যেই খরচের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছে একাধিক মহল। গ্রাম উন্নয়নের টাকা পড়ে থাকায় কটাক্ষকরছে বিরোধীরাও।

বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজের গতি খুবই শ্লথ। যা নিয়ে বিরক্ত জেলা প্রশাসন। ওই পঞ্চায়েতগুলিকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি তথা তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতগুলিকে কাজে আরও গতি আনার কথা বলা হয়েছে। পড়ে থাকা টাকা চলতি মার্চের মধ্যেই খরচের পরিকল্পনা নিয়েছে পঞ্চায়েতগুলি।’’ বিজেপি নেত্রী তথা জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘গ্রামোন্নয়নে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পড়ে রয়েছে। উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। মানুষ ভোটে এর জবাব দেবে।’’

Advertisement

কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না, এ অভিযোগ হামেশাই করেন তৃণমূলের নেতারা। গত মাসে মেদিনীপুরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই অভিযোগ করেছিলেন। ব্যাখ্যা শুনিয়ে বলেছিলেন, ‘‘বিজেপির নেতারা গিয়ে বলছে (দিল্লিতে), রাস্তায় টাকা দিও না। জলে টাকা দিও না। বাড়িতে টাকা দিও না। একশো দিনের কাজে টাকা দিও না। তাহলে মানুষ উপকৃত হবে। আমরা (বিজেপি নেতারা) কী করে ভোট চাইব!’’

প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্রীয় বরাদ্দ কেন সময়ে খরচ হবে না! পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের জেলার জন্য মোট বরাদ্দের ৭০ শতাংশ পায় গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিই। বাকি ৩০ শতাংশের মধ্যে ১৫ শতাংশ করে পায় পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ। কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের টাকা খরচ পুরনো নিয়ম ফিরেছে। এক সময়ে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতই অর্থ কমিশনের টাকা খরচের সুযোগ পেত। কিন্তু চতুর্দশ অর্থ কমিশনে জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতি- এই দুইস্তরকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। তবে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনে ফের পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরের জন্যই টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

বরাদ্দের ৬০ শতাংশ টাকায় (টায়েড ফান্ড) স্বাস্থ্যবিধান প্রকল্প, শৌচাগার নির্মাণ, পানীয় জল প্রকল্প, বৃষ্টির জল ধরে রাখার মতো প্রকল্প করা যেতে পারে। বাকি ৪০ শতাংশ টাকায় (আনটায়েড ফান্ড) স্থানীয় চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী স্থানীয় পরিকাঠামো গড়া যেতে পারে। পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরকেই সেই মতো কাজের পরিকল্পনা করার কথা জানানো হয়েছিল।

পশ্চিম মেদিনীপুরে ২১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। এদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে মোট ৩৯৮ কোটি ৫৫ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭৭৯ টাকা। আর খরচ হয়েছে ২৭৯ কোটি ১৫ লক্ষ ৮৮ হাজার ৮২৬ টাকা (১০ মার্চ পর্যন্ত)। পড়ে রয়েছে ১১৯ কোটি ৩৯ লক্ষ ৮৮ হাজার ৯৫৩ টাকা। শতাংশের নিরিখে খরচ হয়েছে ৭০.০৪ শতাংশ টাকা। পড়ে রয়েছে ২৯.৯৬ শতাংশ টাকা। জানা যাচ্ছে, ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খরচ হয়েছিল ২৬৩ কোটি ৮৬ লক্ষ ১৯ হাজার ৩৮২ টাকা। শতাংশের নিরিখে ৬৬.২০ শতাংশ। ওই দিন থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৫ কোটি ২৯ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪৪৪ টাকা। শতাংশের নিরিখে ৩.৮৪ শতাংশ।

পিংলা, ডেবরার মতো পঞ্চায়েত সমিতি টাকা খরচে পিছিয়ে রয়েছে। ওই সপ্তাহে পিংলা পঞ্চায়েত সমিতিকে ১ কোটি ৫ লক্ষ ৬৩ হাজার ৩৮ টাকা খরচের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতিকে ৬৯ লক্ষ ১৭ হাজার ৪২ টাকা খরচের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ওই সপ্তাহে এই দুই পঞ্চায়েত সমিতি এক টাকাও খরচ করতে পারেনি!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement