আড়ালেই গ্রামের দাবি

গিয়ে লাভ কী! সংসদে কমছে হাজিরা

পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে বোর্ড গঠন হয়ে গিয়েছে প্রায় সর্বত্রই। পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে সংসদ সভাও হচ্ছে নিয়মমাফিক। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই সভায় গ্রামবাসীদের বেশিরভাগ গরহাজির থাকছেন।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৩০
Share:

কারও মনে ভয়। কেউ আবার মনে করেন, কী লাভ! আমাদের কথা তো আর শোনা হবে না। গ্রাম সংসদ সভায় উপস্থিতির হার কেন কমছে, তা খুঁজতে গিয়ে সামনে আসছে এমনই সব ব্যাখ্যা।

Advertisement

পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে বোর্ড গঠন হয়ে গিয়েছে প্রায় সর্বত্রই। পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে সংসদ সভাও হচ্ছে নিয়মমাফিক। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই সভায় গ্রামবাসীদের বেশিরভাগ গরহাজির থাকছেন। দিন কয়েক আগে সংসদ সভা হয়েছিল চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের বান্দিপুর-১ পঞ্চায়েতের চাঁদা সংসদে। ৬৭৬ জন ভোটারের মধ্যে এসেছিলেন মাত্র ৭২জন। একই ছবি দাসপুর-২ ব্লকের চাঁইপাট পঞ্চায়েতের বাঁকিবাজার সংসদেও। সেখানে দিন কয়েক আগে সংসদ সভায় ১০২০ জন ভোটারের মধ্যে এসেছিলেন ১১৪।

অথচ ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তি এই গ্রাম সংসদ সভা। নিয়মমতো এখানেই খোলা মনে নিজেদের দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া জানানোর কথা গ্রামবাসীর। আর তার ভিত্তিতে গ্রামের উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি হওয়ার কথা।

Advertisement

তা-ও গ্রাম সংসদ সভায় যেতে অনীহা কেন?

চন্দ্রকোনার চাঁদা গ্রামের এক গৃহবধূ বললেন, “গত বছর গিয়েছিলাম। জল আনতে বহুদূরে যেতে হয়। তাই সরকারি কল করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার কথা তো কেউ শুনলই না।” গ্রামের এক কলেজ পড়ুয়া তরুণীর আবার বক্তব্য, “সংসদ সভা কবে হল সেটাই তো জানলাম না। কোনও প্রচার হয়নি, বাড়িতে চিঠিও আসেনি।” ক্ষীরপাই ব্লকের হিজলি সংসদের এক প্রবীণ ব্যক্তির কথায়, “এ বার শৌচাগার, গ্রামীণ রাস্তা নিয়ে কিছু বলতাম। একদিন শুনলাম সংসদ সভা তো কবেই হয়ে গিয়েছে। কাউকে কিছুই বলতে দেওয়া হয়নি। এমনটা হলে এলাকার সমস্যা-চাহিদা আর ব্লকে পৌঁছবে কোত্থেকে!”

পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী, বছরে দু’বার এই সংসদ সভা হয়। প্রথমটা হয় নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। দ্বিতীয়টা হয় মে-জুনে। সভায় ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে এবং স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য বাড়ি বাড়ি চিঠি বিলি বা এলাকায় প্রচার চালানোর নিয়ম রয়েছে। মোট ভোটারের ১০ শতাংশ উপস্থিতি থাকলে তবে ‘কোরাম’ হয়। তা না হলে সভা মুলতুবি হয়ে যায় এবং একই স্থানে সাত দিন পরে ফের সংসদ সভা ডাকতে হয়। অভিযোগ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাড়তি হাজিরা দেখিয়ে কোরাম করা হয়। ফলে, জনতার দাবি সামনে আসে না।

এ ক্ষেত্রে শাসক দলের গা জোয়ারি চলে বলেই বিরোধীদের অভিযোগ। দাসপুরের বিজেপি নেতা প্রশান্ত বেরার কথায়, “সংসদ সভায় সবাইকে ডাকা হচ্ছে না। চাহিদার কথা বললে চুপ করে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সিদ্ধান্তে আপত্তি করলে কোথাও কোথাও সভা থেকে বেরিয়ে যেতেও বলা হচ্ছে।”

বিজেপির জেলা সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের কথায়, “তৃণমূল সরকার চায় না সংসদ সভা হোক। ঠিকমতো সভা হলে তো আর দলের লোককে পাইয়ে দেওয়া যাবে না।” তৃণমূল অভিযোগ মানতে নারাজ। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির দাবি, “প্রতি সভায় যথেষ্ট উপস্থিতি থাকছে। মন খুলে সবাই মতামত জানাচ্ছেন। এটা বাম আমলে ছিল না। আর বিজেপি তো মানুষের মতামতের গুরুত্বই বোঝে না।” আর এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) প্রতিমা দাস বলেন, “পদ্ধতি মেনেই সংসদ সভা হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন সমস্যা থাকতে পারে। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement