প্রস্তুতি: লোকাল ট্রেন চালুর আগে ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে পাঁশকুড়া স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র।
বিশেষ ট্রেন চলেছে মাস খানেক আগেই। কিন্তু লোকালের চাকা এখনও গড়ায়নি এ রাজ্যে। সাড়ে সাত পরে আগামী বুধবার থেকে সেই লোকাল ট্রেন ফের চালু হওয়ায় সিদ্ধান্তে আশায় বুক বাঁধছেন রেলের হকারেরা, নিত্যযাত্রীরা। কিন্তু তাঁদের সকলের মধ্যে কত জন ট্রেনে চড়তে পারবেন, সে নিয়েও যাত্রী-হকার, দু’পক্ষের মনেই রয়েছে চিন্তা।
লকডাউনে গত ২৩ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। আনলক পরিস্থিতিতে কিছু এক্সপ্রেস ট্রেন চললেও লোকাল ট্রেন বন্ধই ছিল। লোকাল ট্রেন চালুর দাবিতে সব মহল থেকে দাবি উঠতে শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার রাজ্য ও রেলের বৈঠকে ঠিক হয়, আগামী বুধবার থেকে লোকাল ট্রেন চালু হবে। প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ-পূর্ব শাখায় খড়্গপুরের মধ্যে ৩৪টি লোকাল ট্রেন চলানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই ঘোষণায় আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন এই শাখার রেল হকারেরা। দক্ষিণ-পূর্ব শাখায় প্রায় ১৫ হাজার হকার ট্রেনে নিয়মিত হকারি করে জীবন যাপন করতেন। করোনা কালে যথেষ্ট আর্থিক সঙ্কটে পড়েন তাঁরা। অনেকে বদল করে নেন পেশা। এখন তাঁরাই আশাবাদী। কিন্তু খড়্গপুর শাখায় চলবে মাত্র ৩৪টি ট্রেন। তাতেও দূরত্ব নিয়ে থাকতে পারে হাজারো নিয়ম। যা নিয়ে বিস্তৃত সিদ্ধান্ত হবে আগামী ৯ নভেম্বর। কম ট্রেন এবং নিয়মের গেরোয় আদৌও সব হকারেরা ট্রেনে চড়তে পারবেন কি না, তাতে তাঁদের কাছে থেকে যাচ্ছে চিন্তাও।
যে সব হকারের মুড়ি, চানাচুর, চিপস, ঘুঘনির মতো হাজারো খাবার ফেরি করতেন, তাঁদের প্রশ্ন, করোনা কালে যাত্রীরা আদৌ বাইরের খাবার কিনে খাবেন তো! তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হকারির সুরক্ষা বিধি কী হবে, সে নিয়ে আজ, শনিবার খড়্গপুরে বৈঠকে বসতে চলেছে সমস্ত রেল হকার সংগঠনগুলি। আইএনটিটিইউসি রেল হকার্স ইউনিয়নের পাঁশকুড়া শাখার সম্পাদক সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় আমরা খুবই কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। আমাদের সঙ্গে হকারি করতেন দু'জন টাকার অভাবে আত্মহত্যা করেছেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হকারি ব্যবসা আগের মতো চলবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় আছি। তবে সুরক্ষা বিধি মেনে আমরা হকারি করব। আগামীকাল আমরা একটি বৈঠক করছি। তাতে এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হবে।’’
অন্য দিকে, করোনা পরস্থিতিতে বাস চললেও বাস মালিকরা আগের থেকে অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছেন বলে অভিযোগ। ফলে লোকাল ট্রেন চালু হলে অধিকাংশ নিত্যযাত্রী বাস ছেড়ে ট্রেনের দিকে ঝুকবে বলে মনে করছেন রেল যাত্রী সংগঠনগুলি। কিন্তু ট্রেনের সংখ্যা কম হলে সেই যাত্রীরা সকলে কীভাবে চড়বেন, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। লোকাল ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো এবং প্লাটফর্মগুলিতে নির্দিষ্ট করোনা সুরক্ষা বিধি কার্যকর করার দাবিতে এদিন দক্ষিণ-পূর্ব শাখার জেনারেল ম্যানেজার ও খড়্গপুরের ডিআরএমকে চিঠি দিয়েছে ‘হাওড়া-জকপুর প্যাসেঞ্জারর্স ওয়েলফারে অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনের সম্পাদক অজয়কুমার দলুই বলেন,"রেল প্রথম দফায় যে সংখ্যায় লোকাল ট্রেন প্রথমে চালু করবে বলেছে তা যথেষ্ট নয়। বেশি ট্রেন চালানো হলে প্লাটফর্মে অপেক্ষা করে থাকা যাত্রীর সংখ্যা কমবে। ফলে ভিড় এড়ানো যাবে। ট্রেনের সংখ্যা না বাড়ানো হলে ভিড়ের কারণে সংক্রমণ বাড়বে।’’ এ বিষয়ে রেলের দক্ষিণ-পূর্ব শাখার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সমস্ত রকম সুরক্ষা বিধি মেনে লোকাল ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’