প্রতীকী ছবি।
রেলশহরে অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী খুনের ঘটনায় এ বার অসম থেকে এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। শুক্রবার রাতে অসম থেকে তিন দিনের ট্রানজিট রিম্যান্ডে ধৃত অশোক বিশ্বাসকে খড়্গপুরে নিয়ে আসে টাউন থানার পুলিশ। অসমের হোজাই জেলা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার তাকে খড়্গপুর মহকুমা আদালতে হাজির করে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। বিচারক তার ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
ডাকাতির উদ্দেশ্যেই এই খুন বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। এই ঘটনায় আগেই গ্রেফতার হয়েছিল তিনজন। তবে খুনে সরাসরি যুক্তের সন্ধান এখনও মেলেনি। ঘটনাস্থলে উদ্ধার হওয়া মানিব্যাগের সূত্র ধরে অসম থেকে ধৃত অশোক বিশ্বাসের সূত্র ধরে তদন্ত অনেকটা এগোবেই বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘অশোক বিশ্বাস নামে অসমের ওই যুবক খুনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল। পলাতকদের খোঁজ চলছে।’’
গত ১৩ জানুয়ারি খড়্গপুরের নিউ সেটলমেন্টের রেল কোয়ার্টার থেকে উদ্ধার হয় অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী বছর পঁয়ষট্টির জে বি সুব্রহ্মণ্যমের দেহ। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় খাটে পড়ে থাকা দেহে শুধুমাত্র নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা যায়, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে সুব্রহ্মণ্যমকে। তাঁর পরিচিত এক মহিলার থেকে পুলিশ জানতে পারে, অবসরপ্রাপ্ত ওই রেলকর্মীর সোনার গয়না লুট হয়েছে। অভিযোগ করেন নিহতের বোন।
কী উদ্দেশ্যে খুন তা নিয়ে অবশ্য গোড়ায় ধন্দে ছিল পুলিশ। পরে জানা যায়, ঘটনার আগের রাতে ওই রেল কলোনিতে কেন নৈশরক্ষীরা পাহারা দেয়নি। তার কারণ খুঁজতেই জানা যায়, স্থানীয় সুধীর দাস-সহ রেল কলোনির কয়েকজন যুবক ওই নৈশরক্ষীদের মারধর করে আসতে বারণ করেছিল। সুধীরকে জেরা করতেই পুলিশ নিশ্চিত হয়, লুটের জন্যই এই খুন। সুধীরকে জেরার পরে পাশের রেল কলোনির টি শঙ্কর রাওকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জানা যায়, গোটা ঘটনায় ৬জন জড়িত ছিল। লুটের সামগ্রী যাকে বিক্রি করা হয়েছিল সেই মোহন রাওকেও গ্রেফতার কর হয়। তবে খুনে সরাসরি কে যুক্ত, সেই ধোঁয়াশা কাটেনি। ধৃতদের দাবি, বাকি ৪জন গোটা বিষয়টি জানে। ধৃতদের জেরা করে বাকি চারজনের নাম পেয়েছে পুলিশ। সেই তালিকাতেই ছিল অশোকের নাম।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগেই ওই রেল কোয়ার্টারে তল্লাশি চালিয়ে একটি মানিব্যাগ মেলে। সেই মানিব্যাগে পাওয়া ভোটার কার্ডের জেরক্সে অশোকের নাম, ঠিকানা জানতে পারে পুলিশ। খড়্গপুরের টাউন থানার সাব-ইন্সপেক্টর সুকোমল ঘোষ-সহ চারজন পুলিশকর্মী অসম রওনা দেন। স্থানীয় থানার সহযোগিতা নিয়ে হোজাই জেলায় অশোকের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে অসম থেকে এই কাজে কেন তাকে আনা হয়েছিল তা এখনও পুলিশের অজানা। তবে তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, সুধীরের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে অশোকের। বিভিন্ন সময় চুরি-ডাকাতির জন্য অসম থেকে আগেও খড়্গপুরে এসেছে অশোক।৭ জানুয়ারি মালঞ্চর একটি লজে এসে উঠেছিল অসমের ওই যুবক। এই খুনে অশোকের ভূমিকা ঠিক কী ছিল তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।