নিরাপদ: চলো নিয়ম মতে।
খুদে পড়ুয়াদের বাড়ি থেকে পুলকারে চাপিয়ে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া, আবার স্কুল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসার ছবিটা পুরনো। অভিভাবকেরা নিরাপদ ভেবে পুলকারে তাঁদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠান। কিন্তু সেই পুলকার পড়ুাদের কাছে কতটা নিরাপদ তা খতিয়ে দেখতে রবিবার তমলুক শহরের বেশ কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং পুলকার চালকদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন তমলুক থানার ওসি।
দিন কয়েক আগে হলদিয়ার পেট্রো কার্বন সড়কে কিন্ডারগার্টেনের পড়ুয়াদের নিয়ে একটি পুলকার দুর্ঘটনায় পড়ায় বেশ কয়েকজন পড়ুা জখম হয়। তার প্রেক্ষিতে এই তৎপরতা বলে মনে করছেন অনেকে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় পুলকার নিয়ে কখনও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কিনা, গাড়িতে যান্ত্রিক গোলযোগ ছিল কি না ইত্যাদি অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, কোনও ঘটনা ঘটলে প্রথম কয়েকদিন তা নিয়ে হইটই হয়। পরে সবই ধামাচাপা পড়ে যায়। সে দিকে থেকেই পুলকার দুর্ঘটনা রুখতে আগাম এই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ পুলিশের। জেলা সদর তমলুক শহরের বেসরকারি স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যাতায়াত করা পুলকারের চালক ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিয়ে রবিবার তমলুক থানার ওসি বৈঠক করেন। সেখানে পুলিশের তরফে পুলকার নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও চালকদের বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, তমলুক শহরে বাংলা ও ইংরাজি মাধ্যম ছোট-বড় মিলিয়ে ১২টির বেশি বেসরকারি স্কুল রয়েছে। শহর ছাড়াও সংলগ্ন এলাকার অনেক পড়ুয়া পুলকারে ওইসব স্কুলে যাতায়াত করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিভাবকদের কাছ থেকে নির্ধারিত টাকার বিনিম্যে স্কুল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব গাড়িতে পড়ুয়াদের আনা নেওয়া করা হয়। এর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলকারের চালকদের নিয়োগ করেন। অনেক সময় নিয়ম ভেঙে ওইসব পুলকারে পড়ুয়াদের আনা-নেওয়া করা হয় বলে অভিযোগ। যার জেরেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, খুদে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য কিছু স্কুলের ছোট বাস থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছোট ছোট গাড়ি ব্যবহার করা হয়। ওই সব গাড়িতে বসার আসনের চেয়ে বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রীদের তোলা হয়। এদিন বৈঠকে পুলকারের চালকদের একাংশের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার বিষয়টিও সামনে আসে। এমনকী পুলকার চালকদের নিয়মকানুন না অভিযোগও উঠেছে। জানা গিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে পুলকার চালকদের পরিচয় অভিভাবকদের জানানো হয় না। পুলকারগুলির বাণিজ্যিক গাড়ি হিসেবে পরিবহণ দফতরে রেজিস্ট্রেশন থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু তাও বহুক্ষেত্রে মানা হয় না।
এদিন পুলিশের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পুলকার হিসেবে ব্যবহৃত গাড়ির নথিপত্র ঠিক রাখতে হবে। আসনসংখ্যা অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীদের বসাতে হবে। অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রী নেওয়া যাবে না। চালকদের অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স সঙ্গে রাখতে হবে। চালকদের প্রত্যেকের পরিচয় স্কুল কর্তৃপক্ষকে রাখতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের ওঠা-নামায় সাহায্যের জন্য গাড়িতে একজন কর্মী রাখতে হবে। বৈঠকে আরও জানানো হয়েছে, পুলকার চালানোর নিয়মকানুন শেখাতে আগামী ১ ডিসেম্বর শহরের স্কুলগুলির পুলকার চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এদিন বৈঠকে হাজির শহরের একটি বেসরকারি স্কুলের কর্তা শেখ নাসিম আলি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য ১০টি বাস ও ২টি ছোট গাড়ি রয়েছে। চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখেই আমরা নিয়োগ করি। তবে পুলকার চালানোর জন্য চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য পুলিশের এই উদ্যোগ আমরা সমর্থন করছি। আমরা এবিষয়ে সবরকম সহযোগিতা করব।’’
এক অভিভাবক বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে গাড়িতে তুলে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর সময় অনেক ক্ষেত্রে চালক ছাড়া কেউ থাকে না। এটা চিন্তার বিষয়।’’
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেসাকুমার বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের নিরাপত্তার স্বার্থে তমলুক শহরের পর ধাপে ধাপে জেলার সমস্ত এলাকায় পুলকার নিয়ে এ ধরনের পদক্ষেপ করা হবে। গাড়ির নথিপত্র থেকে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে কি না খতিয়ে দেখা হবে। না থাকলে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’