পরিষ্কার আকাশে হঠাৎ মেঘের আনাগোনা। মুহূর্তের মধ্যে শুরু বৃষ্টি। ক্ষণিকের মধ্যেই অবশ্য বৃষ্টি থেমে গিয়ে ফের রোদের ঝিলিক। এক ঝলকে এই ছিল মহাষষ্ঠীর আবহাওয়া সংবাদ। বৃষ্টিতে অবশ্য থেমে থাকা মানা। পুজো যে শুরু হয়ে গিয়েছে। সকাল থেকেই ভিড় জমল জেলার নানা মণ্ডপে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে তা জনপ্লাবনের আকার নিল।
তমলুক শহরের একাধিক বড় বাজেটের পূজোর উদ্বোধন হয়েছে পঞ্চমীর সন্ধ্যায়। রাজস্থানের জোধপুর রাজবাড়ির আদলে তমলুক শহরের ওয়ান হার্টেড ক্লাবের মণ্ডপ। বাড়তি আকর্ষণ কুমোরটুলির প্রতিমা। বৃহস্পতিবার মহাপঞ্চমী থেকেই তাই দর্শকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল এই মণ্ডপ। পুজো কমিটির সদস্য সৌমেন ঘোষ বলেন, ‘‘মাদুর কাঠির কারুকাজ করা মণ্ডপ দেখতে পঞ্চমীর দিন থেকে বহু মানুষ আমাদের মণ্ডপে আসছেন। দর্শকদের সমাগমে আমরা খুশি। তবে যে ভাবে মাঝেমাঝে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে।’’
তমলুক শহরে দে পাড়ায় নটিবয় ক্লাবের মণ্ডপ ও প্রতিমায় এ বার অন্যতম আকর্ষণ কাঁচের চুড়ির কারুকাজ। ষষ্ঠীর সকালেই এই পুজো দেখতে বেরিয়ে আসেন তমলুকের শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা দেবদুলাল ভক্তা। তিনি বলেন, ‘‘বর্গভীমার মন্দিরে পুজো দিতে এসেছিলাম। সন্ধ্যায় ঠাকুর দেখতে এসে ভিড়ের মধ্যে পড়তে হবে। তাই এ বার সকালেই ঠাকুর দেখে গেলাম।’’ ক্লাবের কর্মকর্তা সৌম্যজিৎ দে বলেন, ‘‘কাচের চুড়ি দিয়ে মণ্ডপসজ্জা। দর্শকদের কাছ থেকে ভাল সাড়া মেলায় আমরা খুশি।’’
ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখতে ষষ্ঠীর বিকেল থেকেই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছে পুলিশ। তমলুক থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর ক’দিন বিকেল থেকে শহরের ভিতরে ট্রাক, বাস ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়াও পরিস্থিতি অনুযায়ী টোটো চলাচলও নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে। তমলুক শহর ছাড়া জেলার শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের কাঁকটিয়া বাজার সর্বজনীন, নোনাকুড়ি সাংস্কৃতিক সংস্থা, রামতারকহাট সর্বজনীন, মেচেদা বাজারের টাউন ক্লাব, ফিসমার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন,শান্তিপুর পশ্চিমপল্লির পূজা মণ্ডপেও দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল যথেষ্ট।
ভিড়ের প্রতিযোগিতায় টেক্কা দিয়েছে কাঁথির পুজোগুলিও। কাঁথির স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সংগঠন ইনার হুইল ক্লাবের উদ্যোগে ফরিদপুর বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধাদের শহরের বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিক বৃদ্ধা লক্ষ্মী ভুঁইয়া, দুলালী দাস, মঞ্জু খাঁড়াদের কথায়, “মণ্ডপে এসে চিন্ময়ী মায়ের মৃন্ময়ী রূপ দর্শন করার অনুভূতিটাই আলাদা।’’ এ দিন সকালে কাঁথি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের স্থায়ী পুস্তক বিপণীর উদ্বোধন হয়। উপস্থিত ছিলেন কাঁথি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী প্রার্থনানন্দ।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যাতেই জনতার ঢল নামে হলদিয়ার পুজো মণ্ডপগুলিতেও। চৈতন্যপুরের ক্যাকটাস, যুগের যাত্রী, নিউস্টার, দুর্গাচকের মিলন সঙ্ঘের মণ্ডপ ও প্রতিমা দেখতে অনেকে ভিড় জমায়। দর্শদের নজর কেড়েছে মহিষাদলের অন্বয়, মাইকো, সাথী, বুলেটের মত পুজোমণ্ডপগুলিও।