মারিশদায় তৃণমূলের মিছিলে ব্যানারে নেই শুভেন্দুর ছবি। নিজস্ব চিত্র
কোথাও শাসক দলের মিছিলের পুরোভাগে ব্যানারে দেখা গেল না জেলা সভাপতি, ও মন্ত্রীর ছবি। কোথাও আবার দলের কর্মসূচিতে দেখা গেল না খোদ বিধায়ককেই। রবিবার জেলায় তৃণমূলের দুই কমর্সূচিতে নজরে পড়ল দু’রকম ছবি।
উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে কিশোরীকে ধর্ষণের এবং রাতের অন্ধকারে নির্যাতিতার মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এবং কেন্দ্রে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে রবিবার কাঁথির মারিশদা থেকে নাচিন্দা পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি নিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। মিছিলে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযয়ের ছবি থাকলেও চোখে পড়েনি অধিকারী গড়ের শিশির অধিকারী কিংবা শুভেন্দু অধিকারীর ছবি। যা নিয়ে জল্পনা চলে দিনভর। কয়েক দিন আগে কাঁথি শহরে একই ইস্যুতে পদযাত্রা করেছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। তার আগে কাঁথি-১ ব্লকের দুলালপুরে একই দাবিতে মিছিল করে শাসক দল। ওই দুটি জায়গাতেও শাসক দলের পতাকা এবং নেত্রীর ছবি ব্যবহার করা হলেও শুভেন্দু অধিকারী এবং জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারীর ছবি দেখা যায়নি।
দলের সাংগঠনিক রদবদলে শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে বলে অভিযোগ দলের একাংশের। তারপর থেকে দলীয় কিংবা সরকারি কর্মসূচিতে সে ভাবে অংশ নিতে দেখা যায়নি শুভেন্দুকে। যা নিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে গুঞ্জন অব্যাহত। তবে এ দিন মিছিলে তাঁদের ছবি না থাকা নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের দাবি, দলের মধ্যে শুভেন্দুর গুরুত্ব কমে যাওয়ায় কেউ কেউ পদে টিকে থাকার জন্য তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তার জন্যই দলীয় কর্মসূচিতে শুভেন্দু এবং শিশিরবাবুর ছবি রাখা হয়নি।’’
যদিও কাঁথি-৩ ব্লক তৃণমূল সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য নন্দদুলাল মাইতির দাবি। ‘‘শুভেন্দু এবং শিশিরবাবু ছাড়া আমরা কিছুই বুঝিনা। তবে এটা একটা ভুল হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি আমাদের নজরে ছিল না।’’
বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছা়ড়েনি বিজেপি। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূলের যে কোনও কর্মসূচিতে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া পূর্ব মেদিনীপুরে শুভেন্দু এবং শিশির অধিকারীর ছবি ও স্লোগান ব্যবহার করাটা রীতি হয়ে গিয়েছিল। এখন বোধহয় অনেকে শুভেন্দুর গুরুত্ব কমছে আঁচ করছেন। তাই তাঁর ছবিও দেখা যাচ্ছে না।’’
এ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘আমার বা শুভেন্দুর ছবি থাকল কি না সেটা বড় কথা নয়। দলের কর্মসূচিই বড় কথা।’’
তবে এ দিনই শাসক দলের ‘মাস্টার মাইন্ড’ প্রশান্ত কিশোরের কর্মসূচি ‘বাংলার যুব শক্তি’ সশরীরে হাজির থাকতে দেখা গিয়েছে জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীকে। উল্লেখযোগ্য ভাবে সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু বিরোধী শিবিরের নেতা হিসাবে পরিচিত তৃণমূল
বিধায়ক অখিল গিরি এবং জেলা তৃণমূলের অন্যতম কো-অর্ডিনেটর অর্ধেন্দু মাইতি।
রবিবার বিকেলে কাঁথির সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডের একটি বেসরকারি প্রেক্ষাগৃহে এই কর্মসূচিতে রাজনীতিতে নবাগত প্রায় একশ জন তৃণমূলে যোগ দেন। তাদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন জেলা তৃণমূল সভাপতি। নবাগতদের উদ্দেশে শিশিরের বার্তা, ‘‘যে উদ্দেশ্যে তৃণমূলে এলেন, তা যেন পূরণ হয়। মানুষের সেবা এবং দলের কাজ নিষ্ঠাভরে করতে হবে।’’
গরহাজিরা নিয়ে অবশ্য অখিলের দাবি, ‘‘চণ্ডীপুরে দলেরই পৃথক কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলাম। তাই কাঁথির কর্মসূচিতে যেতে পারিনি।’’ বিধানসভা ভোটের আগে জেলার রাজনীতিতে অধিকারী শিবিরের ‘বিরোধী’ অখিলের এহেন অনুপস্থিতির আলাদা গুরুত্ব রয়েছে কিনা তা নিয়ে দলেই জল্পনা শুরু হয়েছে।