বাজারের মধ্যেই চলছে উনুন জ্বালিয়ে মিষ্টি তৈরি। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
তমলুক: প্রধান রাস্তা থেকে বাজারে ঢোকার মূল পথেই হোঁচট খেতে হল দোকানের সামনে রাস্তায় ডাঁই করে রাখা জিনিসপত্রে। বাজারের ভিতরের রাস্তার উপরেই মিষ্টির দোকানের সামনে গ্যাসের উনুন জ্বেলে তৈরি হচ্ছে জিলিপি, লুচি থেকে নানা খাবার। গরম তেলের কড়াইয়ের পাশ দিয়ে কোনওরকমে চলছে যাতায়াত। ছবিটা পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুক শহরের অন্যতম প্রাচীন ও প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র বড়বাজারের।
দিনকয়েক আগে কলকাতার দমদমের গোরা বাজার অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়েছে। ওই ঘটনার পর স্বাভাবিক ভাবেই শহরের অন্য বাজারগুলি তো বটেই জেলার বড় বড় বাজারগুলিতেও অগ্নিবিধি কতটা মানা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তমলুক শহরের শঙ্করআড়া এলাকায় শতাব্দীপ্রাচীন এই বাজারে ছোট-বড় মিলে আ়ড়াইশোরও বেশি স্থায়ী–অস্থায়ী দোকান রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, আলু, পেঁয়াজ, আনাজ, মাছ-মাংস-ডিম থেকে মিষ্টি, মুদি দোকান, ষ্টেশনারি সামগ্রী ও পুজোর সামগ্রীর দোকানে ঠাসা এই বাজারে প্রতিদিন শহরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ আসেন। কিন্তু বাজারের অধিকাংশ দোকানে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা বলতে কিছুই নেই বলে অভিযোগ। বাজারের ভিতরে অপ্রশস্ত রাস্তায় ব্যবসায়ীরা নানা জিনিস রেখে দেওয়ায় ঘিঞ্জি চেহারা নিয়েছে। ফলে সাইকেল, মোটরসাইকেল নিয়ে বাজারে ঢোকা তো দূর অস্ত, ঠিকমতো হাঁটাও যায় না। তার উপর নানা দাহ্য সামগ্রীতে গোটা বাজারটাই জতুগৃহের চেহারা নিয়েছে।
যদিও নিরাপত্তা নিয়ে পুরসভার মালিকানাধীন এই বাজারের ব্যবসায়ী এবং পুরসভা দু’পক্ষই দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছে। বাজারে একটি মিষ্টির দোকানদার তপন মাইতি বলেন, ‘‘দোকানে কোনও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে পুরসভা থেকেও কোনওদিন আমাদের কিছু বলা হয়নি। বাজারে আগুন নেভানোর ব্যবস্থাও নেই।’’ বাজারে মুদির দোকান রয়েছে তপন নাগ সিংহের। তাঁর কথায়, ‘‘দোকানে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেই। দুর্ঘটনাজনিত বিমাও করাও নেই। বাজারে আগুন লাগলে বড়সড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’’
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকা এক স্টেশনারি দোকানদার জানান, তাঁর দোকানে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে। দমকলের অনুমতি ও সাহায্য নিয়েই তিনি তা করেছেন। তাঁর আশঙ্কা, বাজারের ভিতরে যা অবস্থা তাতে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিপুল ক্ষতি হবে। এবিষয়ে পুরসভা ও প্রশাসনের নজর দেওয়া প্রয়োজন।
মেছোবাজার ব্যবসায়ী উন্নয়ন সমিতির সভাপতি বিকাশ প্রামাণিক বলেন, ‘‘বাজারের অধিকাংশই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। দোকানে একক ভাবে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা গড়তে পুরসভাকেই দায়িত্ব নিতে হবে।’’
তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন বলেন, ‘‘দীর্ঘদিনের পুরনো ওই বাজারে অগ্নিনির্বাপণের ভাল ব্যবস্থা নেই। বাজার সংস্কার-সহ অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ার জন্য পুরসভা উদ্যোগী হয়েছে।’’