বন্ধ ঝাড়গ্রামের সাবিত্রী সিনেমা হল। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
একসময় যে হল গমগম করত দর্শকদের কলরবে, এখন সেখানে শুধুই নীরবতা। মাকড়সার জালে ঢেকেছে বায়োস্কোপের পর্দা। ধুলো জমছে সিনেমাহলে। উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই হলের চেয়ারগুলোর। অরণ্যশহরের সিনেমাহলগুলো এখন যেন ‘ভুতুড়ে বাড়ি’।
প্রিয়া, রূপছায়া, সাবিত্রী, জনতা— এক সময় ঝাড়গ্রামে রমরমিয়ে চলত চার চারটি সিনেমা হল। এখন বন্ধ সবক’টি হলই। সিনেমা হলের এক কর্মীর কথায়, ‘‘ভিডিও ও টিভি সিরিয়ালের দাপটে সব শেষ হয়ে গেল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রুচির বদল ঘটছে। বড় পর্দায় ছবি দেখার আগ্রহ বাড়ছে। সিনেমাপ্রেমীদের অনেকেই এখন মাল্টিপ্লেক্স-এ ভাল ছবি দেখতে চান। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলেই ছিটকে যেতে হবে।’’
মাল্টিপ্লেক্স রয়েছে প্রায় ৫০ কিমি দূরে খড়্গপুরে। ফলে, ইচ্ছে থাকলেও অনেকে অতটা দূরে যেতে পারেন না। শহরের এক স্কুল শিক্ষিকা রিনা মাহাতো বলেন, “বছর দশেক আগে ঝাড়গ্রামের একটি হলে শেষ বার সিনেমা দেখেছি। এখন তো শহরে কোনও সিনেমা হলই চালু নেই। ছুটির দিনে দীর্ঘপথ উজিয়ে সিনেমা দেখতে যেতে ইচ্ছে করে না।” তবে আভাস নাগ, সৌরভ সিংহের মতো নতুন প্রজন্মের তরুণরা ভাল ছবি দেখার জন্য কলকাতা অথবা খড়্গপুরে ছোটেন। পঞ্চায়েত দফতরের কর্মী আভাস নাগের কথায়, “ঝাড়গ্রাম জেলা শহর হচ্ছে। অথচ সে ভাবে বিনোদনের কোনও আয়োজনই নেই।”
জেলা হওয়ার পথে ঝাড়গ্রাম। পুলিশ জেলা, স্বাস্থ্য জেলার পর জেলা আদালত গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অথচ ঝাড়গ্রাম পুর-শহরে নেই একটিও সিনেমা হল। নেই ভাল পার্কও। শহরের সঞ্চয়িতা পার্কের অবস্থা বেহাল। শহরের প্রাণকেন্দ্র রবীন্দ্রপার্কেও সে ভাবে বিনোদনের ব্যবস্থা নেই।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য কোনও প্রেক্ষাগৃহও নেই অরণ্যশহরে। নাটক থেকে শুরু করে যে কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য বেসরকারি দেবেন্দ্রমোহন হলের উপর নির্ভর করতে হয়। প্রশাসনের বক্তব্য, ঝাড়গ্রাম জেলা হলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে। বিনোদনের ক্ষেত্রটা তখন প্রশস্ত হবে। ঝাড়গ্রাম মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক আজিজুর রহমান বলেন, “ঝাড়গ্রামে একটি রবীন্দ্রভবন তৈরির জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব
পাঠানো হয়েছে।”