চলছে ভোট। এক সঙ্গে তিন প্রার্থী। এগরার এক নম্বর ওয়ার্ডে। নিজস্ব চিত্র
শান্তিপূর্ণ ভোটদানে সুস্থ রাজনীতির ছবি দেখলেন এগরা পুর এলাকার বাসিন্দারা।
রাজনৈতিক দলের প্রতীকের লড়াই থাকলেও বুথের সামনে প্রধান প্রতিপক্ষ শাসক ও বিরোধী দলের প্রার্থীদের একসঙ্গে খোশ মেজাজে গল্পের ছবি রবিবার ভোট গদিতে এসে প্রত্যক্ষ করলেন ভোটাররা। রাজ্যের অন্যত্র ভোট ঘিরে শাসক-বিরোধী অশান্তির মধ্যে সৌহার্দ্যের এমন পরিবেশ দেখে খুশি এগরার মানুষ।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তালিকা অনুযায়ী এগরা পুরসভার চোদ্দোটি ওয়ার্ডে কোনও স্পর্শকাতর বুথ নেই। যদিও পুলিশের তরফে ১ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিশেষ ভাবে পুলিশের নজরদারির ব্যবস্থা ছিল। এ দিন সকাল থেকেই প্রতিটি বুথে ভোটারদের লাইন নজরে পড়ে। ১ নম্বর ওয়ার্ডের কসবা শীতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে শাসক ও বিরোধী দুই দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠলে সেক্টর অফিসার প্রার্থীদের বুথের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। ঝাটুলাল হাইস্কুলের ২৮ নম্বর বুথে দুপুর বারোটার মধ্যে দু’দফায় ইভিএম মেশিন খারাপ হওয়ায় প্রায় দেড় ঘণ্টা ভোটদান বন্ধ ছিল। পরে মেশিন ঠিক করা হলে ফের ভোট শুরু হয়। দলআলুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ নম্বর বুথে দুপুর দেড়টা থেকে প্রায় একঘণ্টা ইভিএম খারাপ থাকায় ভোট প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। সেই সময় বুথের সামনে সাদা পোশাকে থাকা তিন সিভিক ভলান্টিয়ারকে বহিরাগত ভেবে বাসিন্দারা আটকে রেখে মারধর করে। পুলিশ এসে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে। তাতে এক বৃদ্ধ ভোটার আহত হয়। পুলিশের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ভোট না দিয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যান। বিক্ষিপ্ত এরকম দু’একটি ঘটনা ছাড়া ১৪টি ওয়ার্ডেই ভোট শান্তিতেই শেষ হয়।
ভোট সামলাতে পুলিশের ভূমিকায় সন্তুষ্ট শাসক ও বিরোধী দল। এগরার পাশের মহকুমা কাঁথিতে যখন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ছাপ্পা ভোট এবং ইভিএম মেশিন ভাঙচুর, শাসক দলের দুষ্কৃতীদের হামলায় সাংবাদিক থেকে বিরোধীদের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেখানে এগরা পুরসভায় রাজনৈতিক সৌহার্দ্যের আবূহে ভোট নজির তৈরি করল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কোথাও হিংসা বা ভোটদানে বাধা দেওয়ার ঘটনা যেমন দেখা যায়নি। তেমনই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসাবে শাসক ও বিরোধীদলের প্রার্থীদের বুথের বাইরে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে পরস্পরেরক সঙ্গে ভোট নিয়ে আলাপ-আলোচনার ছবি দেখা গিয়েছে। যা দেখে একই সঙ্গে আশ্বস্ত এবং খুশি সাধারণ ভোটাররা। ১ নম্বর ওয়ার্ডের কসবা শীতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনটি বুথ রয়েছে। সকাল থেকে সেখানে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী সুরজ আলি, বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজ্যোতি মাইতি এবং বাম প্রার্থী হরিহর দাস। তবে তা বুথের একশো মিটারের মধ্যে হওয়ায় পুলিশের আপত্তিতে প্রার্থীরা নিজেরাই দূরে সরে যান।
শান্তিপূর্ণ ভোট স্বস্তি দিয়েছে পুলিশ-প্রশাসনকেও। ১ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বুথের দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মী বলেন, ‘‘এখানে ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কোনও সমস্যা হয়নি।’’ হেমন্ত হাতি নামে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ভোটার বলেন, ‘‘এগরায় কখনও ভোটে গণ্ডগোল হয় না। এবারও শান্তিতেই সবাই ভোট দিয়েছে। এই সংস্কৃতি এগরায় বজায় থাকুক আমরা সবাই চাই।’’ গত পুরবোর্ডে তৃণমূল ৯টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছিল। বামেরা ২টি, বিজেপি ১টি , কংগ্রেস ১টি এবং বাম সমর্থিত নির্দল ১টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়। পরবর্তীতে একজন বাম, একজন নির্দল এবং একজন বিজেপি কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। এবার তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে তিনটি ওয়ার্ডে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধরা নির্দল এবং এনসিপি দলের প্রার্থী হয়েছেন। ভোট কাটাকাটিতে শেষ বাজি কারা জিতবে সেটাই দেখার। ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের প্রার্থী শেখ সুরজ আলি বলেন, ‘‘কাঁথির রাজনীতি ও এগরার রাজনীতি সম্পূর্ণ আলাদা। সাংস্কৃতিক শহর এগরায় ভোট নিয়ে কখনও গণ্ডগোল হয়নি। সেই ঐতিয্য আমরা এগরার মানুষ বজায় রাখতে পেরেছি। রাজনীতি উর্দ্ধে উঠে শাসক-বিরোধী সবাই একসঙ্গে ভোটে ছিলাম।’’
এই ওয়ার্ডেরই বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজ্যোতি মাইতির কথায়, ‘‘পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকায় আমি খুশি। এগরার মানুষ সবসময় চায় শান্তির ভোট। তাই কেউই গন্ডগোল করার চেষ্টা করে না। রাজনীতির বাইরে আমরা সবাই বন্ধু।’’