চৌধুরীবাড়ির দুর্গা দালান।
প্রথা আছে, নেই জমিদারির আড়ম্বর। জায়গিরদারি খুইয়ে আজ জৌলুসহীনতার ছায়া চৌধুরীবাড়ির দুর্গাদালানে। তবু কোনওমতে চলে আসছিল এতদিনের দুগোর্ৎসব। কিন্তু এ বার করোনা তাতেও থাবা বসিয়েছে। পুজো ঘিরে যে মেলা বসার রেওয়াজ ছিল এ বার তাতে দাঁড়ি পড়েছে। পুজোর ভোগপ্রসাদ থেকে বঞ্চিত থাকবেন পুজো দেখতে আসা মানুষজন। দূর থেকেই প্রতিমা দর্শন করে সন্তুষ্ট থাকতে হবে তাঁদের।
তিনশো বছর পার করে দেওয়া চৌধুরীবাড়ির পুজো নিয়ে কল্পকথা কম নেই। আনুমানিক অষ্টাদশ শতকে বংশধর হরিদাস পট্টনায়ক চৌধুরী উপাধি পান। তাঁর পুত্র নন্দলাল চৌধুরী। বংশ ধরে রাখতে প্রথম দুর্গাপুজোর আয়োজন হয় পরিবারে। চৌধুরী পরিবারে কুলদেবতা রাধামাধব জিউ। পটাশপুর থানার গোপালপুরে চৌধুরী পরিবারের পুজোয় মা দুর্গা আসেন একচালায়। রথের দিন প্রতিমার কাঠামো তৈরি শুরু হয়। চাপড়াষষ্ঠীতে হাটগোপালপুরে কালীমন্দিরের মাটি ও গোটা সুপারি দেবীর নাভিতে স্থাপন করা হয়। ষষ্ঠীতে ঘট তুলে বিল্লবৃক্ষের তলায় রাখা হয়। সপ্তমীতে কেলেঘাই নদীতে নবপত্রিকার স্নানের পরে ঠাকুর দালানে পুজো শুরু হয়। সোনার অলঙ্কারে সাজেন সপরিবার গিরিরাজ কন্যা।
আচার-রীতিতে এই পুজো এখনও কিছু স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছে। পুজোর হোমের আগুন জ্বালাতে দেশলাই নয়, এখনও চকমকি পাথর ব্যবহার করা হয়। পুজোয় অন্ন ভোগ দেওয়া হয় না। লুচি, সুজি, আলুভাজা, ছোলাভাজার পকান্ন দেওয়া হয়। এমনই নানা প্রথায় ঘেরা এই পুজোর আয়োজনে এ বার করোনার কারণে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
অন্যবার, ষষ্ঠী থেকে দশমী পুজো ঘিরে খিচুড়ি ভোগ বিতরণ করা হলেও এ বার তা হবে না। অঞ্জলির ভিড় আটকাতে ছোট দলে ভাগ করে দেওয়া হবে। পুজো ঘিরে আটদিনের যে মেলা বসতো তা তা বন্ধ থাকছে।পরিবারের সদস্য শ্রীজীব চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রথা মেনেই পুজো হবে। তবে করোনা বিধির কারণে ভোগ প্রসাদ বিতরণ ও মেলা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। মণ্ডপে মানুষের অবাধ আনাগোনা নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’’