শুক্রবার থেকেই চলছে বন্ধ সমর্থকদের যাতায়াত। ঝাড়গ্রামে পাঁচমাথার মোড়ে। নিজস্ব চিত্র
শনিবার ১ এপ্রিল থেকে জঙ্গলমহলের চার জেলায় শুরু হচ্ছে কুড়মি সামাজিক সংগঠনগুলির ‘ঘাঘর ঘেরা’ আন্দোলন। রাজ্য সরকার সংশোধিত সিআরআই রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে পাঠাতে গড়িমসি করছে, এই অভিযোগে কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ)-সহ একাধিক সংগঠন এর ডাক দিয়েছে।
জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবিতে কুড়মিদের এই আন্দোলনে জঙ্গলমহলের জেলাগুলির একাংশে জনজীবন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। আদ, শনিবার থেকে দুয়ারে সরকার শুরু হচ্ছে। আর আজ থেকেই বাস চলাচল বন্ধ থাকছে। ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট বাস ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দিলীপকুমার পাল বলছেন, ‘‘যে কোনও বন্ধ-অবরোধে আমরা বাস চালাই না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাস চলবে।’’
রমজান মাসের কথা মাথায় রেখে আন্দোলনের দিন পরিবর্তনের জন্য কুড়মি সংগঠনের নেতাদের চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছে দু’টি সংখ্যালঘু সংগঠন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মুসলিম লীগের নেতা ফাহাদ আলি জানিয়েছেন, টানা অবরোধে ফলমূল-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি হতে পারে। এর ফলে মুসমিল সম্প্রদায় সমস্যায় পড়বে। কুড়মিদের আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েও সারা বাংলা সুন্নত অল জামায়াতের নেতা রহমান আমেদও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ)-এর নেতা রাজেশ মাহাতো জানিয়েছেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ‘ঘাঘর ঘেরা’ হবেই। রাজেশ বলছেন, ‘‘সংখ্যালঘু সংগঠনের চিঠি গ্রহণ করেছি। তাঁদের রমজানের শুভেচ্ছা জানাই। কিন্তু কুড়মিদের ৭৬ বছরের বঞ্চনার অবসানের দাবিতে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছি।’’
‘ঘাঘর ঘেরা’ হল কুড়মালি প্রবচন। এর অর্থ— কোনও ফাঁক না রেখে চারিদিক ঘিরে ফেলা। তবে শনিবার প্রথম দিন টানা অবরোধ হচ্ছে না। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম শহরের উপকন্ঠে সারদাপীঠ মোড়ে রাজ্য সড়ক, সাঁকরাইল ব্লকের বাকড়া, কেশিয়াপাতা, পাকুড়িয়া, ধগাড়ি, মুড়াকাটি চক, চুনপাড়ায় অবরোধ হবে। তবে রাজেশ জানাচ্ছেন, জেলায় স্বতঃস্ফূর্ত অবরোধও হতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুরের হরিয়াতাড়া, বাঁকিবাঁধ, শালবনি, হাতিগেড়িয়া, কেশিয়াড়িতেও অবরোধ হবে। সোমবার ঝাড়গ্রাম জেলাশাসকের দফতরে ঘেরাও কর্মসূচি রয়েছে। জনপ্রতিনিধিদেরও ঘেরাও করা হবে। মঙ্গলবার খড়্গপুর গ্রামীণের খেমাশুলিতে কলকাতা-মুম্বই জাতীয় সড়ক অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ করা হবে। তবে জরুরি পরিষেবার গাড়ি, স্কুলবাস ও পড়ুয়াদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। মাছ, আনাজ ও ফলের গাড়িকে অবশ্য ছাড় দেওয়া হবে না।
আদিবাসী কুড়মি সমাজও ৫ এপ্রিল থেকে খেমাশুলিতে লাগাতার টাটা-খড়্গপুর রেলপথে অবরোধ (রেল টেকা) ও জাতীয় সড়ক অবরোধের (ডহর ছেঁকা) কথা জানিয়েছে। সব মিলিয়ে উদ্বেগে জঙ্গলমহলবাসী। দুই জেলার পুলিশ-প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও নজরদারি থাকছে।
কুড়মিদের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত ও কুড়মি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইতিহাস প্রকাশ্যে আনারা দাবিতে শুক্রবার ঝাড়গ্রামের জেলাশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছে সারা ভারত কুড়মি সমন্বয় কমিটি। হাতি-মানুষ সংঘাতের সুষ্ঠু সমাধান ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ-সহ নানা দাবিতে এ দিনই মিছিল করে জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয় আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজ।