সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে বাস। যাত্রীর দেখা নেই। মেদিনীপুরে।
সার দিয়ে দাঁড়িয়ে বাস। নট নড়নচড়ন। বাস, কনডাক্টর, খালাসি কারও দেখা নেই।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা। মেদিনীপুর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ঘন ঘন ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলেন প্রদীপ সিংহ। বছর চল্লিশের প্রদীপ পেশায় স্কুলশিক্ষক। প্রতিদিন মেদিনীপুর থেকে ডেবরায় কর্মস্থলে যান বাসে করে। ধর্মঘট ডেকেছে বাম শ্রমিক সংগঠনগুলি। জানতেন। তবু ভেবেছিলেন একটা না একটা কিছু জুটে যাবেই। জোটেনি। একসময় বিরক্ত হয়ে প্রদীপ বলেই ফেললেন, ‘‘যেতে তো চাই। কিন্তু যাব কী ভাবে! বাস তো নেই।’’
এ দিনের ধর্মঘটে প্রদীপের মতোই অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকেরই। ইচ্ছে থাকলেও স্কুল, কলেজ, কর্মস্থলে পৌঁছনো যায়নি। মোটের উপর জেলা জুড়ে ছবিটা একই। প্রভাব যতটুকু যা পড়েছে তা কিছুটা খড়্গপুর এবং ঘাটাল মহকুমা এলাকায়। ছোটখাটো উত্তেজক পরিস্থিতি রেলশহরে তৈরি হলেও তার মাত্রা বিগত ধর্মঘটগুলির মতো ছিল না বলেই মত স্থানীয়দের। বাম, কংগ্রেসের পাশাপাশি জেলা জুড়ে ধর্মঘটের সমর্থনে পথে ছিল এসইউসি।
বিগত ধর্মঘটগুলিতে দেখা গিয়েছিল, বন্ধ থেকেছে শহরের প্রাণকেন্দ্র গোলবাজার। প্রভাব পড়তে দেখা গিয়েছিল খরিদা, গেটবাজার, ইন্দার মতো বাজার এলাকাগুলিতে। বন্ধ থাকত বহু অফিস। এ দিন সকালের কয়েকটি ঘটনায় ইঙ্গিত মিলছিল, একই দিকে গড়াচ্ছে ঘটনাপ্রবাহ। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা হয়নি। যদিও সকাল থেকেই পথে নেমেছিল শ্রমিক সংগঠন সিটু, আইটাক, সিপিএম, সিপিআই ও আইএনটিইউসি।
পুরীগেটে রেললাইনে বসে পড়েছিলেন বাম নেতারা। বেশ কিছুক্ষণের জন্য আটকে যায় একটি মালগাড়ি। পরে অবশ্য ওই অবরোধ উঠে যায়। অবরোধ চলে সড়কপথেও। এ দিন শহরের ইন্দা, খরিদা, মালঞ্চ এলাকায় কিছু দোকানপাট ও ব্যাঙ্কের শাখা বন্ধ ছিল। তবে গোলবাজার ছিল খোলা। খরিদা, গোলবাজারে আনাজ ও মাছের বাজার বসেছিল। তবে সমস্ত অফিস ও স্কুল ছিল খোলা। যাত্রী পরিবহণে বেসরকারি বাস না চলায় প্রভাব পড়লেও সরকারি বাস চলেছে।
ডেবরা ও ঘাটালে কিছুটা প্রভাব পড়েছিল। ডেবরায় অবরোধ করা হয়েছিল রেল লাইন ও জাতীয় সড়ক। আটকে পড়েছিল হাওড়া-খড়্গপুর শাখার একটি লোকাল ট্রেন। ঘাটাল শহরের প্রাণকেন্দ্র কুঠিবাজার,আলামগঞ্জ সহ শহরের অধিকাংশ দোকান পাট বন্ধ ছিল। এমনকি, বন্ধ ছিল হোটেল, খাবারের দোকানও। ঘাটাল মহকুমা শাসকের দফতর সহ সরকারি অফিস, পুরসভা, পঞ্চায়েত সব খোলা ছিল। তবে সরকারি অফিসে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল না। স্কুল, কলেজ খোলা থাকলেও পড়ুয়ার উপস্থিতি ছিল সামান্যই। ডাকঘর, ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। ঘাটাল আদালতেও আইনজীবীরা কেউ হাজির ছিলেন না। তবে আদালতে কর্মীরা সকলেই হাজির ছিলেন। বিচারকরাও এসেছিলেন এজলাসে। রাস্তায় বেসরকারি বাস চলাচল করেনি। রাস্তায় বেরিয়ে নাজেহাল হতে হয় সাধারণ মানুষকে।
ধর্মঘটের তেমন প্রভাব পড়েনি মেদিনীপুরে। শালবনি, কেশপুরের মতো এলাকাও ছিল প্রায় স্বাভাবিক। সকালের দিকে বেশ কিছু দোকানপাটও বন্ধ ছিল। বেলার দিকে দোকানগুলি খোলে। পুলিশ সূত্রে খবর, এদিন ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, ‘‘জেলায় বড় গোলমালের খবর নেই।’’ ধর্মঘটের প্রভাব নিয়ে চাপানউতোর চলেছে দিনভরই। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, ‘‘পুলিশ ধর্মঘট ভাঙতে অতি সক্রিয় ছিল। তবে ধর্মঘট সফল হয়েছে। মানুষ ধর্মঘটের ডাকে সাড়া দিয়েছেন।’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৌমেন খান বলেন, ‘‘মানুষ ধর্মঘটকে সমর্থন করেছেন।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘বাংলার মানুষ ধর্মঘট চায় না। এদিন জেলায় ধর্মঘট হয়নি।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাসের দাবি, ‘‘ধর্মঘটের প্রভাব পশ্চিম মেদিনীপুরে একেবারেই পড়েনি।’’
ধর্মঘটে নিরুত্তাপ গড়বেতার তিনটি ব্লক। হয়নি কোনও গন্ডগোল। দোকানপাট খোলা ছিল, হাটবাজারে বেচাকেনা হয়েছে। চলেছে ট্রেনও। চন্দ্রকোনা রোড, গড়বেতা এলাকায় কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, ডাকঘর বন্ধ ছিল। কয়েকটি হিমঘরে এদিন কাজকর্ম বন্ধ রাখেন কর্মীরা।