প্রতীকী ছবি।
জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৭০ পার হয়ে গিয়েছে। করোনা পরিস্থিতি শুরুর প্রায় ৫ মাস কাটার পরে অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে জেলায় আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে। তমলুক জেলা হাসপাতালে ওই যন্ত্র বসেছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, জেলায় দ্রুত করোনা পরীক্ষার জন্য বর্তমানে উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে র্যাপিড আন্টিজেন টেস্ট হচ্ছে। তবে এই পরীক্ষার ভিত্তিতে করোনা পরীক্ষার পরেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছে সে বিষয়ে অনেক সময়েই নিশ্চিত হওয়া যায় না। তার জন্য ওই ব্যক্তিদের লালারসের আর একটি নমুনা আরটিপিসিআর (রিয়েল টাইম রিভার্স ট্রান্সক্রিপশান পলি মারেজ চেন রিয়্যাকশন) পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হয়। ওই পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষার জন্য বর্তমানে জেলায় সংক্রমিতদের নমুনা কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু এ ভাবে কলকাতায় নমুনা পাঠানোর পর পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে দু’তিন সময় লেগে যায় বলে অভিযোগ। ফলে করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেকটা বিলম্ব হচ্ছে। এতে রোগীদের অবস্থার অবনতি ঘটার আশঙ্কা থাকছে।
এ ধরনের সমস্যা এড়াতে আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে দ্রুত করোনা পরীক্ষার জন্য পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে এই অত্যাধুনিক যন্ত্র বসাতে উদ্যোগী হয় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। গত জুলাই মাসের শেষ নাগাদ জেলা হাসপাতালে যন্ত্র আসার পর তা বসানোর কাজ শুরু হলেও এখনও করোনা পরীক্ষা শুরু হয়নি।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, অত্যাধুনিক ওই যন্ত্র বসানোর কাজ ধাপে ধাপে করতে বেশ কিছুদিন সময় লেগেছে। যন্ত্রপাতি বসানো হলেও ওই যন্ত্রে করোনা পরীক্ষার জন্য যে দক্ষ কর্মী ও চিকিৎসক প্রয়োজন তা মিলছিল না। এ ছাড়াও ওই যন্ত্রে করোনা পরীক্ষার জন্য আইসিএমআর ( ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ )-এর অনুমোদনও প্রয়োজন। কিন্তু তা না থাকায় ওই যন্ত্রে করোনা পরীক্ষা শুরু করা যায়নি। যন্ত্র চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ কর্মী ও চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় ও তাঁদের প্রশিক্ষণে কিছু দিন লেগেছে। সম্প্রতি আইসিএমআর-এর প্রাথমিক ছাড়পত্রও এসেছে। তাই দ্রুত সম্ভব অত্যাধুনিক ওই যন্ত্রে করোনা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আইসিএমআর প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়ায় বুধবার ওই যন্ত্রে পরীক্ষামূলক করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে। এর জন্য আগামী মঙ্গলবার কলকাতার ‘নাইসেড’ থেকে ‘কিট’ আনা হবে। পরীক্ষামূলক ওই পরীক্ষার রিপোর্ট আইসিএমআরে পাঠানো হবে। তারা চূড়ান্ত ছাড়পত্র দিলে জেলায় আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষা শুরু হবে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৮০০ জনের র্যাপিড টেস্ট হচ্ছে। আর ৫০০-৬০০ জনের নমুনা আরটিপিসিআর টেস্টের জন্য কলকাতায় পাঠানো হচ্ছে। জেলায় এই যন্ত্র চালু হলে একদিনেই আরটিপিসিআর টেস্টের ফল জানা যাবে। কিন্তু কবে জেলায় আরটিপিসিআর টেস্ট চালু হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। জেলায় এর মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়েছে। তাই কেন আরও আগে এই ব্যবস্থা করা গেল না সেই প্রশ্ন উঠেছে। জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘আরটিপিসিআর টেস্ট করার জন্য যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। নতুন কর্মী নিয়োগ ও তাঁদের প্রশিক্ষণ হয়েছে। এই যন্ত্রে করোনা পরীক্ষার জন্য আইসিএমআরের প্রাথমিক ছাড়পত্র মিলেছে। আশা করা যায়, চলতি মাসেই করোনার আরটিপিসিআর টেস্ট শুরু করা যাবে।’’