উদাসীন হোম

বিয়ের পরে পুড়ে মৃত্যু অনাথ যুবতীর

আগুনে পুড়ে মৃত্যু হল রেলশহর খড়্গপুরের এক বধূর। অনাথ এই যুবতী মেদিনীপুরের সরকারি হোমে থাকতেন। হোম থেকেই বিয়ে হয়েছিল তাঁর। অভিযোগ, এই মৃত্যুর পরেও হাত গুটিয়ে বসে আছেন হোম কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৫ ০০:৪০
Share:

আগুনে পুড়ে মৃত্যু হল রেলশহর খড়্গপুরের এক বধূর। অনাথ এই যুবতী মেদিনীপুরের সরকারি হোমে থাকতেন। হোম থেকেই বিয়ে হয়েছিল তাঁর। অভিযোগ, এই মৃত্যুর পরেও হাত গুটিয়ে বসে আছেন হোম কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

গত শনিবার অগ্নিদ্বগ্ধ হন প্রীতি কউরের (২১)। রবিবার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এমন ঘটনায় সাধারণত হোম-কর্তৃপক্ষ অভিযোগ জানালে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুলিশে অভিযোগ জানানোয় গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার ওই যুবতীর ময়নাতদন্ত হয়েছে এসএসকেএমে। অথচ, এ দিন দুপুর পর্যন্ত হোমের তরফে পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়নি। কেন? সদুত্তর এড়িয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক প্রবীর সামন্ত বলেন, ‘‘হোম-কর্তৃপক্ষ পুলিশকে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানাচ্ছেন।’’ কেন অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে গড়িমসি? মেদিনীপুরের ওই সরকারি হোমের সুপার সুপ্রিয়া কুমারের জবাব, “আমি কিছু বলব না। যা জানার জেলা থেকে জেনে নিন!” অতিরিক্ত জেলাশাসক সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিষয়টি দেখছি।’’

মেদিনীপুর শহরের রাঙামাটিতে ‘বিদ্যাসাগর বালিকা ভবন’ রয়েছে। হোমটি রাজ্য সরকারের সমাজকল্যাণ দফতরের অধীন। গত জানুয়ারি মাসে একই দিনে হোমের তিনজন আবাসিকের বিয়ে হয়। এদেরই একজন তুলি দাস। বছর একুশের তুলির বিয়ে হয় খড়্গপুর শহরের খরিদার বাসিন্দা পরবিন্দর সিংহের। বিয়ের পরে তুলির নাম হয় প্রীতি কউর। পরবিন্দরের টেলারিং দোকান রয়েছে। বিয়ের আগে পাত্রের সমস্ত দিক নিয়ে খোঁজখবর করেই হোমের আবাসিকের বিয়ের বন্দোবস্ত করা হয়। ছোট অনুষ্ঠান হয়। সেখানে চার হাত এক হয়।

Advertisement

তুলির বাপের বাড়ি বলতে এই হোম। শ্বশুরবাড়িতে অগ্নিদ্বগ্ধ হয়ে এই আবাসিকের মৃত্যুর খবর পেয়েও কেন তড়িঘড়ি কোনও পদক্ষেপ করলেন না হোম-কর্তৃপক্ষ, প্রশ্ন উঠছে। এমন ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বধূর গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য পুলিশের এক সূত্রে খবর, শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা পুলিশকে জানিয়েছেন, বধূ নিজেই গায়ে আগুন লাগিয়ে নেন। আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। গত শনিবার দুপুরে ওই বধূকে অগ্নিদ্বগ্ধ অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শারিরীক অবস্থা দেখে ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

পুলিশের ওই সূত্রে খবর, বধূ যে অগ্নিদ্বগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, তা পুলিশের তরফ হোম- কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। তবে, হোম- কর্তৃপক্ষ দ্রুত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে কী করা উচিত, তা ভাবতে গিয়েই অনেকটা সময় কাটিয়ে দিয়েছেন। যদিও হোমের এক সূত্রের দাবি, জেলা থেকেই প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়নি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক মেদিনীপুরের এই হোমের এক কর্মী বলেন, ‘‘অনাথ মেয়েরা এখানে থাকে। নতুন জীবন শুরু করতে চাওয়ার আকাঙ্খায় কেউ কেউ বিয়েতে সম্মত হয়। অনাথ মেয়ের বিয়ে দিলেই কি সব দায় চলে যায়? এ ক্ষেত্রে হোম-কর্তৃপক্ষের আরও তত্‌পর হওয়া উচিত ছিল। মৃত্যুর প্রকৃত কারণটাও সামনে আসা জরুরি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ হলে তার ভিত্তিতে তদন্ত হবে। তদন্তে সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement