রাজ্যপালের হাত থেকে স্মারক নিচ্ছেন সেরামুদ্দিন। রবিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য Sourced by the ABP
কিছুটা দূরের দর্শকাসনে অভিনেতা আমির খান। তিনিও দর্শকাসনে। মঞ্চে জগদীপ ধনকড়। পশ্চিমবঙ্গবাসী হওয়ায় যাঁকে আগে থেকেই চেনেন সেরামুদ্দিন চিত্রকর। অনুষ্ঠানের ঘোর যেন কাটতেই চায় না তাঁর। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনের দূরত্বটা তাঁর পক্ষে যথেষ্টই বেশি। নয়া আর নয়াদিল্লির সেতুবন্ধনের কাজ করেছে সেরামুদ্দিনের রামায়ণি পট।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রেডিয়ো অনুষ্ঠান ‘মন কি বাত’এর ১০০তম সম্প্রচার দিবস উপলক্ষে প্রসার ভারতী এক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। গত বুধবার দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে আয়োজিত সম্মেলনের শিরোনাম ছিল ‘ন্যাশনাল কনক্লেভ অব মন কি বাত @১০০’। সারা দিনের এই সম্মেলনের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন উপরাস্ট্রপতি জগদীপ ধনকর, যিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ছিলেন। ছিলেন কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। পরে আসেন অমিত শাহও।
সম্মেলনে আমন্ত্রিত ছিলেন সেরামুদ্দিন। অনুষ্ঠানে তাঁদের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুণী মোট ১০০ জন আমন্ত্রিত ছিলেন। এঁদের সকলেরই নাম প্রধানমন্ত্রী কোনও না কোনও ‘মন কি বাত’এর অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেছিলেন। বাংলা থেকে এমন ১৭ জন আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে সেরামুদ্দিন চিত্রকরের রামায়ণের পটের কথা বলেছিলেন।
বুধবার সেরামুদ্দিনদের সারাদিন কাটে বিজ্ঞান ভবনের অনুষ্ঠানে। বাংলা শুধু নয়, অন্য রাজ্যের আমন্ত্রিতদের সঙ্গেও আলাপ হয়েছে তাঁর। শনিবার রাজ্যের ১৭ জন দিল্লি থেকে চলে আসেন কলকাতায়। রবিবার ‘মন কি বাত’এর সরাসরি সম্প্রচার দেখেন রাজভবনেই। তার আগে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস ১৭ জনের হাতে ‘মন কি বাত’এর বিশেষ স্মারক তুলে দেন। অনুষ্ঠান শেষে নয়াতে ফেরা।
‘‘এই কদিন যেন স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে গেল। পট আঁকার সুবাদে নানান মেলায় গিয়েছি। কত অনুষ্ঠানেও। কিন্তু এই ক’দিন তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।’’— ফোনে বলা কথায় সেরামুদ্দিনের আবেগ ঝরে পড়ছিল। আমির খান ও তিনি একই অনুষ্ঠানে দর্শকের আসনে বসবেন, স্বপ্নেও ভাবেননি। কাছাকাছি আসনে ‘হিন্দি ছবির এক নায়িকা’ ছিলেন বলে সেরামুদ্দিন জানালেন। যদিও নাম মনে করতে পারেননি। এই অনুষ্ঠানে ছিলেন অভিনেত্রী রবিনা টন্ডন, বক্সার নিখাত জারিনরাও।
পটুয়া হিসেবেই তো এই সম্মান পাওয়া। তাই সেরামুদ্দিন চিত্রকর হিসেবে নয়, নয়ার পটুয়া পাড়ার সকলের পক্ষ থেকেই তাঁর এই সম্মান পাওয়া বলে ভাবতে চান। ‘মন কি বাত’এ তাঁর পট নিয়ে আলোচনার পরে বেশ কিছু রামায়ণি পটের বরাত পেয়েছেন বলে জানালেন সেরামুদ্দিন। এখনও হাতে সে রকম বরাত রয়েছে। আবার রামায়ণি পট আঁকাতে মন দেবেন। এই পটের সম্প্রীতির সুরেই আকৃষ্ট হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারতের ঐক্যের সুর।