খেমাশুলিতে কুড়মিদের রেল অবরোধ। নিজস্ব চিত্র
কুড়মিদের জাতিসত্তার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ছেন শাসকদলেরই লোকজন! কখনও প্রকাশ্যে, কখনও অন্তরালে। গোয়েন্দা সূত্রে এমন তথ্য পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষমহল। অস্বস্তি ছড়িয়েছে শাসকদলের অন্দরেও। কুড়মিদের ‘ঘাঘর ঘেরা’ আন্দোলনের সঙ্গে শাসকদলের কেউ যুক্ত আছেন কি-না সে ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছে নবান্ন।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, গত বছর সেপ্টেম্বরে খেমাশুলিতে জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধ চলাকালীন তৃণমূলের এক জনপ্রতিনিধি আন্দোলন মঞ্চে হাজির ছিলেন। সেই ছবি গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। এ ছাড়াও তৃণমূলের কিছু লোক গতবার কুড়মিদের অবরোধে শামিল হন বলে খবর। এ বার বিরোধী দলের কিছু কর্মীকে আন্দোলনে দেখা গিয়েছে। ফলে কুড়মিদের ‘ঘাঘর ঘেরা’য় শাসকদলের কেউ আছেন কি না, কড়া নজর রাখা হচ্ছে বলে খবর। এ ছাড়াও গোপনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে শাসকদলের কারা যোগাযোগ রাখছেন সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রশাসনের এই তৎপরতার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। প্রথমত, কুড়মি সংগঠনগুলি এ বার রাজ্য সরকারকে বিঁধে আন্দোলনে নেমেছে। কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিআরআই) তরফে কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির স্বপক্ষে জাস্টিফিকেশন রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে রাজ্য পাঠায়নি বলে সরব হয়েছে একাধিক কুড়মি সংগঠন। এ দিকে পঞ্চায়েত ভোটের আগে এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে কী পদক্ষেপ করা হবে তাও প্রশাসনের তরফে স্পষ্ট নয়। অন্য দিকে, কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্ত না করার দাবিতে সরব হয়ে সওয়াল করছে আদিবাসী সংগঠনগুলি। প্রশাসনিক স্তরেও আদিবাসী সংগঠনগুলি স্মারকলিপি দিয়েছে। জাতিসত্তার আন্দোলনে রাশ টানতেও দ্বিধাগ্রস্ত পুলিশ-প্রশাসন। তাতে জাতিসত্তার আন্দোলন আরও বড় আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। তবে সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোটের আগে জঙ্গলমহলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজনৈতিক দলের লোকজনের কুড়মি আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার
বিষয়টি অস্বীকার করছেন না কুড়মি সামাজিক সংগঠনের নেতারা। কুড়মি সমাজের (পশ্চিমবঙ্গ) সভাপতি রাজেশ মাহাতো, আদিবাসী জনজাতি কুড়মি সমাজের সভাপতি শিবাজী মাহাতো একযোগে বলছেন, ‘‘রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে সামাজিক পরিচিতি। কুড়মি জাতির সর্বস্তরের মানুষের যোগদানে আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে। কুড়মিদের দাবি নিয়ে সরকার সঠিক পদক্ষেপ করুক।’’ পাশাপাশি রাজেশদের হুঁশিয়ারি, দাবির স্বপক্ষে সদর্থক পদক্ষেপ না করে সরকার যদি অন্য বিষয়ে আগ্রহ দেখায় তাহলে আন্দোলনকে অন্যপথে চালিত করার দায় সরকারেরই। জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘সব সম্প্রদায়কে সমান চোখে
দেখতে হবে, এটাই আমাদের দলের নির্দেশ। দলের কেউ সেই নির্দেশ অমান্য করলে শীর্ষ নেতৃত্ব এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
ঝাড়গ্রাম শহর তৃণমূলের সভাপতি নবু গোয়ালা বলছেন, ‘‘যে কোনও মানুষের আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। তবে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কোনও আন্দোলন কর্মসূচিতে শাসকদলের নেতৃত্ব বা জনপ্রতিনিধি যুক্ত হলে সেটা একেবারেই অনভিপ্রেত।’’ গোয়েন্দা পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। সামগ্রিক পরিস্থিতির রিপোর্ট তৈরি করে রাজ্যে পাঠানো হবে।’’ তবে রাজ্য পুলিশের এক সূত্রে জানা গিয়েছে, কুড়মিদের আন্দোলন তোলার বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দেশ আসেনি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো পদক্ষেপ করা হবে।