ফাইল চিত্র।
আদিবাসী দিবসে সংবর্ধনা প্রাপ্তির পরে এ বার ‘ওয়েস্টবেঙ্গল ট্রাইবস অ্যাডভাইসরি কাউন্সিলে’র বৈঠকে আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে ডাক পেলেন ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির তিন নেতা— ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি আদিত্য কিস্কু, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অসিত খাটুয়া ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ভোলানাথ মাহাতো। সদ্য পুনর্গঠিত ওই কাউন্সিলের প্রথম বৈঠকটি হবে আগামী ২৩ অগস্ট, সোমবার বিকেলে নবান্নের সভাঘরে।
অসিত ও ভোলানাথ আদিবাসী নন। ফলে জল্পনা শুরু হয়েছে শাসকদলের অন্দরেই। বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সামাজিক সংগঠনগুলিও প্রশ্ন তুলেছে। কারণ, পুনর্গঠিত কাউন্সিলে জঙ্গলমহলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মুন্ডা, লোধা ও ভূমিজদের প্রতিনিধিত্ব নেই। তৃণমূলের একাংশের ধারণা, আগামী পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের রাজনৈতিক বিন্যাসের অঙ্ক মাথায় রেখেই জঙ্গলমহলের ওই তিন নেতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ৯ অগস্ট ঝাড়গ্রামে আদিবাসী দিবসের রাজ্যস্তরের অনুষ্ঠান মঞ্চে ওই তিন নেতাকে জঙ্গলমহলের ‘বিশিষ্ট সমাজসেবী’ হিসেবে সংবর্ধনা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেই নবান্নের বৈঠকেও ডাক পেলেন ওই তিন নেতা।
আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের অধীনে রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দানের জন্য ওই কাউন্সিল রয়েছে। গত ৯ জুলাই কাউন্সিলের পুনর্গঠন হয়েছে। চেয়ারপার্সন মুখ্যমন্ত্রী নিজে, আর ভাইস চেয়ারপার্সন আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী। রাজ্যের নতুন ১১ জন আদিবাসী বিধায়ক সদস্য হিসেবে রয়েছেন। তবে বাদ গিয়েছেন পারগানা মহলের নেতা রবিন টুডু। তাঁর স্ত্রী বিরবাহা সরেন টুডুকে অবশ্য শনিবার চিঠি দিয়ে নবান্নের বৈঠকে ডাকা হয়েছে। পারগানা মহলের রবিন বিরোধী গোষ্ঠীর দুই আদিবাসী নেতা শিবশঙ্কর সরেন ও শুকচাঁদ সরেনও আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে বৈঠকে ডাক পেয়েছেন। আদিবাসী দিবসে এঁরাও সংবর্ধিত হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, জঙ্গলমহলের আঞ্চলিক রাজনীতি ও আদিবাসী সমাজের বিভাজনের অঙ্কেই ডাক পেয়েছেন অনুশীলন পার্টির তিন নেতা ও পারগানা মহলের দুই সামাজিক নেতা। একসময়ে আদিত্য, অসিতরা প্রয়াত নরেন হাঁসদার ঝাড়খণ্ড পার্টিতেই ছিলেন। নরেনের মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রী ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) বর্তমান সভানেত্রী চুনিবালা হাঁসদার সঙ্গে মতবিরোধের কারণে আদিত্যরা বেরিয়ে গিয়ে পরে ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি গড়েন। তবে ২০১৯ সালে ঝাড়গ্রাম লোকসভার ঝাড়খণ্ডী প্রার্থী চুনিবালার মেয়ে বিরবাহা হাঁসদাকে সমর্থন করেছিলেন আদিত্যরা। এ বার বিধানসভায় বিজেপিকে ঠেকাতে জঙ্গলমহলে তৃণমূল প্রার্থীদের সমর্থন করে ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি। ঝাড়গ্রামের বিধায়ক বিরবাহা এখন তৃণমূলের প্রতিমন্ত্রী। তিনিও কাউন্সিলের সদস্য। তবে দলীয় সংগঠন দুর্বল হলেও চুনিবালা তাঁর স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচয় বজায় রেখেছেন।
এ দিকে, পারগানা মহলের বিভাজনে অস্বস্তিতে রয়েছে শাসকশিবির। রবিন বিরোধী গোষ্ঠী বিভিন্ন দাবিতে প্রশাসনিক মহলে স্মারকলিপি দেওয়া শুরু করেছে। রবিন অবশ্য সরকারপন্থী হিসেবেই এখনও পর্যন্ত নরম মনোভাব নিয়ে চলেছেন। গত বছর থেকে তিনি পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কল্যাণ ও শিক্ষা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আছেন। তাঁর স্ত্রী বিরবাহাও জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহাল হয়েছেন। তাই ভারসাম্যের অঙ্কেই শিবশঙ্কর ও শুকচাঁদের পাশাপাশি আদিত্যদেরও কাউন্সিলের আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়েছে বলে অনুমান। রাজনৈতিক মহলের একাংশের আবার ব্যাখ্যা, বিধানসভা ভোটে সমর্থনের পুরস্কার স্বরূপ আদিত্যদের গুরুত্ব বাড়িয়ে পরোক্ষে জোটস্বার্থে চাপ বাড়ানোর কৌশল এটা। পারগানা মহলের দু’টি গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টাও বটে।
এ প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রামের বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রমের কটাক্ষ, ‘‘পদাধিকার বলে কাউন্সিলে সাংসদের থাকার কথা। কিন্তু আমার নামই নেই। মুন্ডা, ভূমিজ, লোধা-শবররাও যে আদিবাসী সেটা বোধহয় রাজ্য সরকার ভুলে গিয়েছে। স্রেফ রাজনীতির স্বার্থেই পুনর্গঠিত কমিটিতে পছন্দের লোকজনকে রাখা হয়েছে।’’ যদিও কাউন্সিলের সদস্য বন প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা বলছেন, ‘‘সাংসদ সবেতেই রাজনীতি দেখেন। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়নে সব সময়ই সদর্থক পদক্ষেপ করে চলেছেন।’’