musician

Bijay Mahato: বসেনি মূর্তি, ঝুমুর সম্রাটের অনাদরে হতাশা

কুড়মি সম্প্রদায়ের বিজয়ের গানের সুরে মজে রয়েছে জঙ্গলমহলের আট থেকে আশি। ঝুমুর গানকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২২ ০৮:৩১
Share:

বিজয় মাহাতো। ফাইল চিত্র।

আজ বুধবার, ২২ জুন তাঁর প্রয়াণ দিবস। মৃত্যুর তিন বছর পেরিয়ে গিয়েছে। তারপরেও কার্যত উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছেন ‘ঝুমুর গানের সম্রাট’ বিজয় মাহাতো। অনুরাগীদের দাবি সত্ত্বেও ঝাড়গ্রাম শহরের মধুবন এলাকায় বসেনি তাঁর মূর্তি। স্মৃতি রক্ষার্থে সেভাবে কোনও প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই এখনও। আজ, শহরের একটি অতিথিশালায় বিজয়ের স্মরণসভা ও ঝুমুরগানের অনুষ্ঠান হবে ‘সারা ভারত ভারত কুড়মি সমন্বয় সমিতি’ এবং ‘জঙ্গলমহল ঝুমুর ও লোকশিল্পী সমন্বয় মঞ্চে’র আয়োজনে।

Advertisement

কুড়মি সম্প্রদায়ের বিজয়ের গানের সুরে মজে রয়েছে জঙ্গলমহলের আট থেকে আশি। ঝুমুর গানকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এ রাজ্যের জঙ্গলমহলের পাশাপাশি, ঝাড়খণ্ড, বিহার ও ওড়িশাতেও তিনি ‘ঝুমুর সম্রাট’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। ভবতোষ শতপথী, ললিতমোহন মাহাতো, সুনীল মাহাতোর মতো ডাকসাইটে গীতিকারদের লেখা অজস্র গান গেয়েছেন বিজয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সুনীল মাহাতোর লেখা, ‘পিঁদাড়ে পলাশের বন, পালাব পালাব মন, নেংটি ইঁদুরে ঢোল কাটে, বতরে পিরিতি ফুল ফুটে’। ভবতোষ শতপথীর লেখা ‘একটা ধমসা বনাই দে, একটা মাদল কিনে দে...হামি গাইব বাজাব, মইচ্ছা পড়া জীবনটাকে বেদম পাঁজাব’ গানটি তো আজও জঙ্গলমহলবাসীর মুখে মুখে ফেরে। বিজয় যেন জঙ্গলমহলের কথামুখ। গীতিকার লক্ষ্মণ রায়ের লেখা ‘শুনগো বাবু বহুবিটি, জলজঙ্গল হামদের মাটি, বাপের ভিটা বিকাঁঞ দিব নাই হে। অধিকারটা ছাড়াঞ লিব ভাই’ গানটিতে জঙ্গলমহলের নিপীড়িত মানুষের প্রতিবাদের সুর রয়েছে।

২০১৯ সালের ২২ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিজয়ের মৃত্যু হয়। আদতে জামবনির কাদোপিন্ড্রা গ্রামের বাসিন্দা হলেও কয়েক দশক ধরে ঝাড়গ্রাম শহরের মধুবন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন বিজয়। তাঁর পরিজনরা সেখানেই থাকেন। বিজয়ের মৃত্যুর পরে তাঁর অনুরাগীরা মধুবন এলাকায় বিজয়ের মূর্তি স্থাপন ও প্রয়াত শিল্পীর নামে রাস্তার নামকরণের দাবি করেছিলেন পুরসভার কাছে। শিল্পীর নামে ঝুমুর অ্যাকাডেমি গঠনের দাবিও রয়েছে। কিছুই হয়নি। প্রখ্যাত ঝুমুর সঙ্গীতশিল্পী ইন্দ্রাণী মাহাতো বলছিলেন, ‘‘আমি কোনও গান সুর করতে গেলে দেখি বিজয়কাকু কত বছর আগে সেই কাজ করে গিয়েছেন। ঝুমুরের সুর তাঁর রক্তে। অথচ মানুষটা জীবদ্দশায় যথাযোগ্য সম্মান পেলেন না। মৃত্যুর পরেও তাঁর স্মৃতি রক্ষায় সেভাবে উদ্যোগও চোখে পড়ছে না।’’

Advertisement

সারা ভারত ভারত কুড়মি সমন্বয় সমিতির পশ্চিমবঙ্গ শাখার আহ্বায়ক অশোক মাহাতোর আক্ষেপ, ‘‘ঝুমুর সম্রাটের মূর্তি বসেনি, তাঁর নামে শহরে রাস্তার নামকরণও হয়নি। প্রয়াত শিল্পীর নামে ঝুমুর অ্যাকাডেমিও হয়নি। তাঁকে যোগ্য সম্মান দেওয়ার দাবিতে আমরা প্রশাসনিক মহলে বহুবার দরবার করেছি।’’ ঝুমুর গানের বর্ষীয়ান গীতিকার ললিতমোহন মাহাতো বলছেন, ‘‘ঝুমুরগানে বিজয়ের বিকল্প নেই। প্রয়াত শিল্পীর প্রতি সরকারি উদাসীনতায় আমরা হতাশ।’’ অভিমান ঝরে পড়েছে বিজয়ের মেয়ে পম্পা মাহাতোর গলায়। পম্পাও ঝুমুরশিল্পী। তিনি বলছেন, ‘‘জঙ্গলমহলবাসীর হৃদয়ে বাবা রয়েছেন। কোনও প্রত্যাশা করছি না। নিজের চেষ্টায় বাবার কাজগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’’

পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক পর্ষদের ভাইস চেয়ারপার্সন রথীন্দ্রনাথ মাহাতোর অবশ্য আশ্বাস, ‘‘বিজয় মাহাতোর স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখার জন্য বোর্ডের বৈঠকে আলোচনা করে প্রস্তাব রাজ্যকে পাঠানো হয়েছে। ঝাড়গ্রাম শহরে তাঁর মূর্তি বসানোর জন্য পুর-প্রশাসনের কাছে জায়গা চাওয়া হয়েছে। স্থান নির্বাচন হয়নি। কুড়মি পর্ষদের উদ্যোগেই মূর্তি তৈরি করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement