শিশির অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
সেই ২০০৯ সাল থেকে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ। মনমোহন সিংহের সরকারে মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। বিধায়ক হয়েছেন একাধিক বার। কিন্তু কখনও এমন ‘হামলার’ মুখে পড়েতে হয়নি তাঁকে। মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির তেঁতুলতলা বাজারের কাছে গাড়িতে ইট ছোড়া এবং তাঁর আহত হওয়া নিয়ে ‘বিস্মিত’ সাংসদ শিশির অধিকারী। প্রবীণ সাংসদের অভিযোগ, তাঁকে খুনের চেষ্টা হয়েছিল। আক্রমণকারীদের তিনি চেনেন। বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের ‘গুন্ডামি’ করতে দেখেছেন।
মঙ্গলবার পঞ্চায়েত সমিতিতে স্থায়ী সমিতি গঠন উপলক্ষে খেজুরি-২ বিডিও অফিসে ভোট দিতে যান শিশির। দুপুরে তিনি বিডিও অফিসে ঢোকার সময় থেকেই তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এমনকি, বিডিও অফিসেও বোমাবাজি হয়। বিডিও ত্রিভুবন নাথ এবং সেখানকার ক্যান্টিনের মালিক জখম হন। এই গন্ডগোলের মধ্যে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে গাড়িতে ওঠেন কাঁথির সাংসদ শিশির। কিন্তু কয়েক কিলোমিটার যেতেই তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে কয়েক জন ইট ছোড়েন বলে অভিযোগ। তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। সাংসদের গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে যায় ইটের আঘাতে। আচমকা ওই আক্রমণে গাড়ির ব্রেক কষেন চালক। তাতে মাথায় আঘাত লাগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বাবার। সাংসদের আর এক পুত্র, তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী জানান, হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরে সংবাদমাধ্যমকে অশীতিপর শিশির বলেন, ‘‘আমাকে আক্রমণ করাই ওদের লক্ষ্য ছিল। খুনের চেষ্টা হয়েছিল।’’ সাংসদের দাবি, তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটল। তিনি আরও বলেন, ‘‘আক্রমণকারীদের আমি চিনতে পেরেছি। ওদের আগেও দেখেছি। আমি এক জন সাংসদ। তাই যেখানে যেখানে প্রয়োজন, সেখানে এ নিয়ে অভিযোগ জানাব।’’ অন্য দিকে, দিব্যেন্দুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে খেজুরি থানার পুলিশ এই ‘হামলা’র ঘটনার তদন্ত করছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তার পর তৃণমূলের থেকে দূরত্ব বাড়ে কাঁথির অধিকারী বাড়ির। একাধিক বার দলবিরোধী আইনে শিশিরের সাংসদপদ বাতিল করার আর্জিও জানিয়েছে তৃণমূল। অন্য দিকে, খাতায় কলমে তৃণমূল সাংসদ শিশিরকে একাধিক বার বিজেপির সভাতে দেখা গেলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দেননি তিনি। আবার তৃণমূলের অন্দরেও তিনি ‘নিষ্ক্রিয়’। এমতাবস্থায় কিছু দিন আগে এগরা-২ পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী কমিটির ভোটাভুটিতে যোগ দিতে গিয়ে তৃণমূল সমর্থকদের ‘চোর-চোর’ স্লোগান শুনতে হয় কাঁথির সাংসদ শিশিরকে। মঙ্গলবারের ঘটনায় শিশির নির্দিষ্ট কারও নাম করেননি। তবে ‘ঠিক জায়গায়’ অভিযোগ জানাবেন বলেছেন।