হলদিয়া, কাঁথি, পাঁশকুড়া, তমলুক-সহ একাধিক এলাকায় অবরোধ শুরু করেছেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।
দলের বুথ সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ ভুইয়াঁর ‘খুনের’ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ময়নায় ১২ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দিয়েছে বিজেপি। যার জেরে বুধবার সকাল থেকেই অশান্ত হয়ে উঠেছে ময়না। এ বার সেই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ল গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। হলদিয়া, কাঁথি, পাঁশকুড়া, তমলুক-সহ একাধিক এলাকায় অবরোধ শুরু করেছেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। জেলার একাধিক জায়গায় রাস্তায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হচ্ছে। অবরোধ তোলা নিয়ে বিভিন্ন জায়গাতে ধস্তাধস্তিতেও জড়িয়ে পড়েন পুলিশ এবং বিজেপি কর্মীরা। পটাশপুরে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিতে পুলিশের তরফে লাঠিচার্জ করা হয় বলেও বিজেপির অভিযোগ। অন্য দিকে, অবরোধ তোলা নিয়ে পুলিশি অভিযানের পাল্টা পথে নেমেছেন ময়নার বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দা। পাঁশকুড়ায় বিক্ষোভ সমাবেশে শামিল হয়ে পথ অবরোধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাংসদ তথা বিজেপির র্সবভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও।
বুধবার বন্ধের সমর্থনে একের পর এক বাজার, পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ রাখার আবেদন জানান দিন্দা। তিলখোলা পঞ্চায়েত অফিসে কাজকর্ম স্বাভাবিক চলছে দেখে পঞ্চায়েত কর্মীদের গেট বন্ধ রেখে কাজ করার অনুরোধ করেন তিনি। পাশাপাশি, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়েও তিনি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দোকানপাট বন্ধ রাখতে বলেন। পরে রাস্তায় বসে পড়ে অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হন দিন্দা।
অশোকের দাবি, “প্রয়োজনে আমাকে গ্রেফতার করা হোক। কিন্তু এখানে বিজেপি নেতাকে যে ভাবে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে টেনে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানানো হবে। আমরা বার বার বলেছিলাম অপহরণ করে খুন করা হয়েছে। সেখানে অখিল গিরি-সহ অন্যরা বলছেন এটা পারিবারিক ঘটনা। এর পেছনে বড় মাথা কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশের ওপর আমাদের কোনও ভরসা নেই। আমরা নিজেরাই আমাদের এলাকা পাহারা দেব।’’
বিজেপির তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘একটা দল তাদের দলীয় কর্মসূচি পালন করছে। ময়না-সহ গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে রাস্তা অবরোধ করা হচ্ছে। এই নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু যে ঘটনাকে হাতিয়ার করে এ সব হচ্ছে সেখানে তৃণমূলকে অযথা জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা চলছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে শুধুমাত্র বাকচা পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপি প্রায় ১২ হাজার ভোটের লিড পেয়েছিল। তাই পরিষ্কার যে, এই এলাকায় বিজেপির প্রাধান্য বেশি। বাকচা এলাকা দীর্ঘ দিন ধরেই উত্তেজনাপ্রবণ। সেখানে যে কোনও ঝামেলা হলেই তাতে তৃণমূলের নাম টেনে আনা হয়। আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
বিজেপির এই বন্ধের জেরে ময়নার স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেলা বাড়তেই রাস্তায় সাধারণ মানুষ আনাগোনা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি, ময়নার একাধিক জায়গায় অবরোধকারীদের ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ।
ঘটনাচক্রে, বুধবার শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করেছিলেন জেলা জুড়ে ১০০ অবরোধ হবে। সেই মতোই অনেক জায়গায় অবরোধের জেরে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে গোটা জেলায়। এই মুহূর্তে সমগ্র পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক জায়গায় যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।