মারিশদা থানার পুলিশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই থানায় অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ে সে। প্রতীকী চিত্র।
বুধবার ঘড়িতে তখন রাত দশটা। হঠাৎই ‘আমাকে বাঁচাও’ বলে এক কিশোর মারিশদা থানায় ঢুকে পড়ে। তার হাতে পায়ে আঘাতের চিহ্ন। মারিশদা থানার পুলিশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই থানায় অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ে সে। তড়িঘড়ি থানার পুলিশ কর্মীরা তার প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তাকে সুস্থ করে তোলে। জ্ঞান ফিরলে কাঁদতে কাঁদতে ওই কিশোর জানায় তাতে রীতিমতো শিহরিত হযে যান পুলিশকর্মীরা।
পুলিশকে বছর বারোর ওই কিশোর জানায়, টানা আট দিন না খেতে পেয়ে সে মায়ের হাতে ঘরবন্দি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কোনওরকমে পালিয়ে থানায় চলে এসেছে। তার আরও অভিযোগ, খেতে না দিয়ে ঘরে আটকে রেখে ধারালো কাচ দিয়ে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল মা। তারপরই বুধবার রাতে মায়ের হাত থেকে কোনওরকমে পালিয়ে আসে সে।
কিশোরের কাছে সব শুনে খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, পূজোয় নতুন জামা প্যান্ট কেনা নিয়েই মায়ের সঙ্গে ছেলের গোলমাল বাধে। নতুন জামা কেনার জন্য মায়ের কাছে বায়না করেছিল ওই কিশোর। সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রের বাবা রাজমিস্ত্রির কাজের সুবাদে কেরলে থাকেন। মা বিড়ি শ্রমিক। বাড়িতে মা এবং ছেলে থাকে। পুজোর কয়েকদিন আগে ওই কিশোরের বাবা ব্যাঙ্কের আকাউন্টে কিছু টাকা পাঠিয়েছিলেন। কিশোরের দাবি, মাকে জামা-প্যান্ট কিনে দিতে বলায় কম দামের জামা প্যান্ট কিনে দিয়েছিল। তা পছন্দ হয়নি তার। তাই ভাল জামা-প্যান্ট কিনে দেওয়ার বায়না ধরে। কিন্তু সংসারের অভাবের কথা জানিয়ে মা তাতে রাজি হননি।
এর পর এই কিশোর মাকে না জানিয়ে তার মামার সঙ্গে যোগাযোগ করে। অনলাইনে জামা কেনার জন্য বাড়িতে থাকা এটিএমের কার্ড ও পিন নম্বর বলে মামাকে বলে দেয়। ঘটনা জানতে পেরে মা রেগে তাকে বাড়ির ভেতর আটকে রাখেন। কিশোরের দাবি, তাকে খেতেও দেয়নি মা। ঘরে মুড়ি রাখা ছিল সেটাই সে খায়। এই কয়েকদিন তাকে ঘর থেকেও বেরোতে দেয়নি ও খেতেও দেয়নি। শেষ পর্যন্ত দশমীর দিন সে কোনওরকমে কাছেই পিসির বাড়িতে চলে গিয়ে সেখানে ভাত খায়। পরে বাড়ি ফিরলে মা রেগে গিয়ে তার গলায় ভাঙা কাচের টুকরো দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। কোনওরকমে মায়ের হাতে থেকে পালিয়ে সে পুলিশের কাছে পৌঁছে যায়।
বৃহস্পতিবার সকালে ওই কিশোরের পিসি মারিশদা থানায় যান। প্রতিবেশীরাও থানায় এসে সবকিছু জানান। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের দাবি, ওই কিশোরের মা মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই ওই কিশোরের বাবাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। যদিও ওই কিশোর জানিয়েছে, সে আর তার মায়ের কাছে ফিরে যাবে না। এমনকী বাবা না আসা পর্যন্ত বাড়িতেও যেতে রাজি নয় সে। কাঁথির এসডিপিও অভিষেক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই কিশোরের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করার পাশাপাশি তার মায়ের বক্তব্য জানার চেষ্টা চলছে।’’ আপাতত ওই কিশোরকে হোমে রাখার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ।