—প্রতীকী চিত্র।
সৈকত নগরী দিঘায় বেশ কিছু দিন ধরেই পুরীর আদলে বিশাল জায়গা নিয়ে সরকারি উদ্যোগে জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের কাজ চলছে। রামমন্দিরের আবহে হিন্দুভোট টানতে লোকসভা ভোটে এই মন্দির তৃণমূলের অন্যতম তাস হবে বলে মনে করা হচ্ছিল। আগামী এপ্রিলে এর উদ্বোধন করার কথা খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
এ বার সেই দিঘাতেই একটি মসজিদ তৈরির ঘোষণা হল। এর পিছনেও শাসক দলের সংখ্যালঘু ভোট টানার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলে বিরোধীদের দাবি। তৃণমূলের জোট সঙ্গী জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ এই মসজিদ বানাবে। জমি দিচ্ছে রাজ্য সরকার। জমি চিহ্নিত করে ফেলা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
রবিবার জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ-এর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক আব্দুস সামাদ বলেছেন, “বছরখানেক আগে জেলা সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছিলেন। সে সময় প্রশাসনিক সভায় আমি বলেছিলাম, মুসলিম পর্যটকদের অসুবিধে হয় প্রার্থনা করতে। এখানে একটা মসজিদ তৈরি করা হোক। তিনি তৎক্ষণাৎ জেলাশাসককে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। সেই মাফিক পর্যায়ক্রমে প্রশাসনের নানা স্তরে বৈঠক হয়েছে। দিঘায় মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলাশাসকের দফতরে বৈঠক হবে। সেখানে ওই জমি হস্তান্তর নিয়ে কথাবার্তা হবে।” প্রসঙ্গত, রবিবার জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ-এর জেলা সম্মেলন আয়োজন করা হয় দিঘায়। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতা য় কর্মসূচি রয়েছে সংগঠনের। সেই আলোচনার পর সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করা হয় সংগঠনের তরফে। সেখানে সংগঠনের পক্ষ থেকে মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি জানানো হয়।
নিউ দিঘার পিকনিক কমপ্লেক্সের কাছাকাছি সমুদ্র সৈকতের গা ঘেঁষে গড়ে উঠতে চলেছে মসজিদ। সেখানে ২ একর ১১ ডেসিমেল জমি দিঘা- শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ তাদের দেবে বলে জানানো হয়। যদিও এ বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক তনবীর আফজল বলছেন, “মসজিদ নির্মাণের জন্য ওঁরা কিছু জমি চেয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”
মসজিদের কথা জানাজানি হতেই শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর। দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক তথা বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপ কুমার দাস বলছেন, “জগন্নাথ মন্দির কে তৈরি করতে বলেছিল? মসজিদ তৈরি জন্য জমিও বা দিতে হবে কেন সরকারকে? সাধারণ মানুষের উন্নয়ন আর কর্মসংস্থান জোগাড় করাই যে কোন সরকারের একমাত্র কাজ। কিন্তু রাজ্য সরকার পুরোপুরি তার উল্টো পথে চলছে।”
পাল্টা, রামমন্দিরের প্রসঙ্গ তুলে বিজেপিকে আক্রমণ করেছে ঘাসফুল শিবির। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের কথা বলেন। অযোধ্যায় রাম মন্দির নিয়ে বিজেপি যা করছে তাতে দেশের মানুষ বুঝে গিয়েছেন যে, সেটা আসলে বিজেপির মন্দির। দিঘায় অনেক মন্দির থাকলেও মসজিদ ছিল না। তাই জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ সেখানে মসজিদ তৈরি করতে জমি চেয়েছে।”