আসাদুদ্দিন ওয়াইসি। ফাইল চিত্র।
লক্ষ্য একুশের বিধানসভা ভোট। পশ্চিম মেদিনীপুরে পাকাপাকিভাবে সাংগঠনিক কাজকর্ম শুরু করল ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস- ই- ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (এআইএমআইএম)। আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দলটি বিহারে বিধানসভা ভোটে সাফল্য পেয়েছে। এ বার নজরে বাংলা।
জানা যাচ্ছে, শনিবার মেদিনীপুরে মিমের এক কর্মী বৈঠকও হয়েছে। ছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব। জেলার বিভিন্ন ব্লকের কর্মীরা এই বৈঠকে যোগ দেন। দলীয় সূত্রে খবর, জেলাস্তরের প্রথম কর্মী বৈঠকে দলের সাংগঠনিক অবস্থা ও ভোটে লড়ার রণকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে ছিলেন আনিসুর রহমান, জামিরুল হোসেন প্রমুখ। জেলা নেতৃত্বের তরফে ছিলেন শেখ সানি, শেখ আকবর প্রমুখ।
পেশায় আইনজীবী আনিসুর মানছেন, ‘‘আমরা আমাদের শক্তিকে সমৃদ্ধ করছি। কর্মীদের সংগঠিত করতে মেদিনীপুরে বৈঠক হয়েছে।’’ বিধানসভা ভোটে মিম প্রার্থী দেবে বলে জানাচ্ছেন আনিসুর। তবে জেলার ক’টি আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে তা স্পষ্ট করেননি তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘অবশ্যই আমরা প্রার্থী দেবো। কতগুলি আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে, এখনও ঠিক হয়নি। যথাসময়ে ঠিক হবে।’’
বিহারে সাফল্য মিলতেই কি নজরে বাংলা? আনিসুরের জবাব, ‘‘বিহারের থেকে বাংলার মাটি অনেক বেশি উৎকর্ষ। বাংলায় মিমের ফল অনেক ভাল হবে।’’ কেন মিম এ বার ভোটের ময়দানে, তার ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন ওই নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ চাইছেন একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি। আমরা মনে করি, মিম সেই জায়গাটা পূরণ করতে সক্ষম হবে।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘দেশের ১০ শতাংশ মানুষ ৯০ শতাংশ সম্পদ ভোগ করছেন। আর ৯০ শতাংশ মানুষ ১০ শতাংশ সম্পদ নিয়ে কামড়াকামড়ি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সমাজ ব্যবস্থা বদলাতে হবে। সেই জন্যই রাজনৈতিক লড়াইয়ে আমরা অবতীর্ণ হয়েছি।’’
জেলায় মিমের প্রবেশে চাপানউতোর শুরু হয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে। তৃণমূলের দাবি, মিমকে আসলে ব্যবহার করছে বিজেপি। বিজেপির পাল্টা দাবি, মুসলিম ভোট ভাগ করতে মিমকে ব্যবহার করছে তৃণমূলই। তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির দাবি, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে মানুষ রয়েছেন। যে কেউ ভোটে লড়তে পারেন। তবে তৃণমূলের কোনও ক্ষতি করতে পারবেন না।’’ বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শমিত দাশও বলেন, ‘‘ওদের কোনও সংগঠন নেই। এই জেলায় কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না ওরা।’’ একই দাবি বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্যের। তাঁর কথায়, ‘‘জেলায় ওই দল কোনও ফ্যাক্টর হবে না।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর, গড়বেতা, পিংলা, খড়্গপুরের (গ্রামীণ) মতো আসনে সংখ্যালঘু ভোট ক্ষমতা দখলের নির্ণায়ক হয়ে ওঠে। বেশ কয়েক বছর ধর জেলায় সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে তৃণমূলের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ওয়াইসির দল মেরুকরণের রাজনীতি করে পশ্চিম মেদিনীপুরে সংখ্যালঘু ভোটে থাবা বসালে তৃণমূলের সমূহ বিপদ। সূত্রের খবর, ওয়াইসির দল যে গোপনে সংগঠন বাড়াচ্ছে, সে সম্পর্কে জেলায় আগেই সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল রাজ্য গোয়েন্দা দফতর।
একাধিক মহল মানছে, জেলার কিছু আসনে বড় ফ্যাক্টর মুসলিম ভোট। সংখ্যালঘু ভোট বিভাজন যত চওড়া হবে, তত চাপে পড়বে তৃণমূল। তাদের মতে, আর এই ফাঁকফোকর দিয়েই নিজেদের শক্তি আরও বাড়াতে মরিয়া চেষ্টা করবে বিজেপি। আবার অনেকের মতে, বিজেপি এই ভোট টানার লড়াইয়ে সে ভাবে থাকে না। লড়াইটা বাম-কংগ্রেস ও তৃণমূলের। কিন্তু মিম প্রার্থী দিলে কিছু আসনে সমীকরণ নিঃসন্দেহে বদলাবে। মূলত, সংখ্যালঘু ভোটের কথা চিন্তা করেই জেলার কয়েকটি আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভেবেছে মিম।
দলের নেতা আনিসুর বলেন, ‘‘মানুষ বিকল্প চাইছেন। বিকল্প হিসেবে মিম উঠে আসছে এবং আরও উঠে আসবে।’’