Corona

তৃতীয় ঢেউ ঠেকাতে প্রস্তুতি

তৃতীয় ঢেউয়ের আগে তাই শিশু চিকিৎসায় বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের পুরনো ভবনে নতুন করে কিছু পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২১ ০৭:১৮
Share:

তোড়জোড়: মেদিনীপুর মেডিক্যালে শিশু কোভিড ওয়ার্ড। নিজস্ব চিত্র।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখন নিম্নমুখী। তবে আগামী দিনে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনুমান, তৃতীয় ঢেউয়ে বেশি সংক্রমিত হবে শিশুরা। কারণ, শিশুরা টিকাকরণ কর্মসূচির বাইরে থাকছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আগাম প্রস্তুতি শুরু করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনও। শিশু করোনা রোগীর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরুও হয়েছে।

Advertisement

জেলাশাসক রশ্মি কমল মানছেন, ‘‘কিছু পরিকল্পনা হয়েছে। শিশুদের চিকিৎসায় যে পরিকাঠামো রয়েছে জেলায়, তাকেও আরও মজবুত করা হচ্ছে।’’ রাজ্যের সহকারী স্বাস্থ্য অধিকর্তা সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গীও মানছেন, ‘‘সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউয়ের দিকে চেয়ে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে।’’ স্বভাবতই সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে সংক্রমিত শিশু রোগীদের চিকিৎসা পরিকাঠামো গড়ে তোলায়। প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ঢেলে সাজা হচ্ছে হাসপাতালের শিশু বিভাগ। তৈরি হচ্ছে নতুন পরিকাঠামো। প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলাশাসকের নির্দেশে কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি এক বৈঠক করেছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পিনাকীরঞ্জন প্রধান। বৈঠকে ছিলেন মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু, হাসপাতালের সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজা প্রমুখ। জানা যাচ্ছে, সংক্রমিত শিশুদের চিকিৎসায় পর্যায়ক্রমে ৩৬টি শয্যা গড়া হবে। এরমধ্যে ১২টি এসএনসিইউ সুবিধাযুক্ত। ১২টি এইচডিইউ সুবিধাযুক্ত। বাকি ১২টি সাধারণ অক্সিজেন সংযোগ যুক্ত।

প্রথম ঢেউয়ে জেলায় খুব বেশি সংক্রমিত হয়নি শিশুরা। মেডিক্যাল সূত্রে খবর, সেই সময় ৩-৪ জন সংক্রমিত শিশু ভর্তি হয়েছিলেন এখানে। তবে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে সংক্রমিত শিশুর সংখ্যা তুলনায় বেড়েছে। মেডিক্যালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তারাপদ ঘোষও মানছেন, ‘‘তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমিত শিশুর সংখ্যা বেশি।’’ ইতিমধ্যে ২১ জন সংক্রমিত শিশু ভর্তি হয়েছে মেডিক্যালে। এর মধ্যে বছর দুয়েকের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। জেলার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সংক্রমিত শিশুর সংখ্যা বেশি বলেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর্বে শিশুদের চিকিৎসায় ‘প্রোটোকল’ তৈরি করা হয়েছে। মেডিক্যালের শিশু বিভাগে ৯০টি শয্যা রয়েছে। মাঝে এক সময়ে রোগীর সংখ্যা কমলেও এখন ফের রোগী বেড়েছে। তারাপদ মানছেন, ‘‘৬০-৭০ শতাংশ শয্যা ভর্তি থাকে এখন।’’

Advertisement

তৃতীয় ঢেউয়ের আগে তাই শিশু চিকিৎসায় বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের পুরনো ভবনে নতুন করে কিছু পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানেই থাকবে এসএনসিইউ সুবিধাযুক্ত ১২টি শয্যা। এর মধ্যে ‘পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ বা পিকুর ৬টি শয্যা এবং ‘নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ বা নিকুর ৬টি শয্যা থাকার কথা। মেডিক্যাল সূত্রে খবর, সংক্রমিত শিশুদের চিকিৎসায় ধীরে ধীরে এখানে ১০০টি শয্যা প্রস্তুতের ভাবনা রয়েছে। তারাপদ মানছেন, ‘‘পিকু তৈরি হচ্ছে। নিকুও তৈরি হচ্ছে।’’

মেডিক্যালে এখন করোনা চিকিৎসায় ৯৬টি শয্যা রয়েছে। এরমধ্যে ২৬টি এইচডিইউ সুবিধাযুক্ত। বাকি ৭০টির মধ্যে প্রসূতিদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১০টি শয্যা। মেডিক্যালের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সদ্যোজাত শিশু থেকে ১২ বছর পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শিশুদের কথা মাথায় রেখেই প্রস্তুত করা হচ্ছে পিকু এবং নিকু, এই দু’টি ইউনিটকে। তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’’ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকও বলেন, ‘‘তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। চিকিৎসায় আরও উপযোগী পরিকাঠামো গড়া হচ্ছে। শিশুদের চিকিৎসায় গুরুত্ব তো দেওয়া হচ্ছেই। দেখা হচ্ছে, তাদের জন্য কোভিড-বেড যেন পর্যাপ্ত থাকে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement